চাকরি-ঠিকাদারিসহ নানা দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আব্দুল মঈনের গাড়ি আটকিয়েছে কুবি শাখা ছাত্রলীগ। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে উপাচার্য নিজ দপ্তর থেকে খাওয়ার জন্য বাংলোতে যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠলে ছাত্রলীগ তার পথ আটকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কাছে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাদের চাকরি, ঠিকাদারি কাজসহ নানা দাবি জানান। কিন্তু, উপাচার্য তাদের অনৈতিক দাবির সাথে একমত না হওয়ায় সভাপতি ইলিয়াস উপাচার্যের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
এরপর উপাচার্য দুপুরের খাবারের জন্য দপ্তর থেকে নেমে বাংলোর উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে গাড়ি অবরোধ করেন ইলিয়াস। এ সময় ইলিয়াসসহ ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাদের বিভিন্ন আক্রমণাত্বক কথা বলতে শোনা যায় বলে জানান সেখানে উপস্থিত অন্তত তিনজন। প্রায় ১০ মিনিট বাকবিতণ্ডা চলার পর শিক্ষকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে গাড়ি ছেড়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'কিছু দাবি ছিল তাদের। সে দাবির প্রেক্ষিতেই প্রায় ১০ মিনিটের মতো উপাচার্যের গাড়ি অবরুদ্ধ রেখেছিল তারা। এরপর শিক্ষকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে উপাচার্যের গাড়ি ছেড়ে দেয়।'
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। মেয়েদের হলের পানি সমস্যা আছে সেটার সমাধানের জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি।'
চাকরি ও ঠিকাদারির দাবির অভিযোগের ব্যাপারে ইলিয়াস বলেন, 'আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য বলেছি। জামাত-শিবির তো না তারা। সরকার ক্ষমতায় এখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি চাওয়া তো অন্যায় দাবি না।'
ঠিকাদারি চাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'মেয়েদের হলের পাম্পের সমস্যা এটা লাখ টাকার নিচের কাজ। এই ঠিকাদারি আমরা কেন চাইবো!'
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, 'উপাচার্য স্যার তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে লিখিত চাইলে তারা লিখিত দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা এসে বিভিন্ন আবদার করবে, কিন্তু সেগুলো যৌক্তিক হওয়া উচিত। উপাচার্য স্যারকে কেউ বলতে পারে না এটা করেন বা এটা বন্ধ রাখেন। কিছু করা বা না করা এটা উপাচার্য স্যারের এখতিয়ার।'
তিনি যোগ করেন, 'আমি দেখেছি উপাচার্য স্যার সবকিছু নিয়মের ভিতর থেকেই করেন। নিয়মের বাহিরে তিনি কিছুই করেন না। এখন হয়ত নিয়মের বাহিরে যেতে অনেকেই চাপ প্রয়োগ করতে পারে।'
এ ব্যাপারে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ.এম. আবদুল মঈন বলেন, 'তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক ছিল না। কিছু অন্যায় দাবি নিয়ে এসেছিল তারা। আমি এগুলো মেনে নেই নি। তাই তারা আমার গাড়ি অবরুদ্ধ করেছে। আমি বলে দিয়েছি আমি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।'
এর আগে ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ইলিয়াস যে বক্তব্য দিয়েছে এটা অত্যন্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক। তার বক্তব্যে স্পষ্ট বুঝা গেছে সে উপাচার্য স্যারকে ইঙ্গিত করেই এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছে।
জানা যায়, গত উপাচার্যের সময়ে ইলিয়াসের সুপারিশ অনুযায়ী ছাত্রলীগের ছড়জন নেতা সেকশন অফিসার হিসেবে ও একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, আরেকজনকে এডহকে সেকশন অফিসার হিসেবে নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিকে (ইলিয়াস-মাজেদ) ১ বছরের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন। তারা এবং তাদের পরে আসা শোভন-রাব্বানী সাবেক হয়ে গেলেও ২০১৭ সালে দেয়া কুবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী মারধরসহ নানা অভিযোগ উঠছে। বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন প্রায় ১৬ বছর ধরে। এতো বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকে অনেকেই নেতিবাচক ভাবে দেখছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: