বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বক্তব্য দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চড়ম সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই ছাত্রনেতা।
গত ১৭ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এসময় হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তৃতীয়। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহন করেন। তিনি সাত বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং ১৪ বছর বয়সে (বেরিবেরি) রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তার শিক্ষাজীবন চার বছর পিছিয়ে পড়ে। শিক্ষাজীবন পিছিয়ে যাওয়ার পরও তিনি দমে যাননি।'
এক পর্যায়ে লিটন আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ১৯২৮ সালে, স্যরি ১৯২৪ সালে, তিনি হচ্ছে ১৯১৮ সালে জনাবা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি বঙ্গমাতাকে বিবাহ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। তারপর তার রাজনৈতিক জীবন শুরুই করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।’
অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান লিটন ১৯১৮ সালে বঙ্গবন্ধুর বিবাহের কথাটি নিশ্চিত করেন। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৭ মার্চ বক্তব্য দিলেও ১৯ মার্চ অনলাইনে এই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান লিটন গণমাধ্যমকে বলেন, 'বক্তব্য দেওয়ার সময় পিছন থেকে অনেক আওয়াজ আসছিলো তখন আমি ভুল বলে ফেলছি। অনেক লোকের সমাগম ছিলো তখন পিছন থেকে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন তারিখ বলছিলো, এতে করে আমার কনসেন্ট্রেশান ব্রেক (মনোযোগে ব্যাঘাত) হয়েছিলো। আমার এই বক্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সামনের দিনগুলোতে চেষ্টা করব এরকম ভুল যেনো আর না হয়।'
সেখানে সাধারণ সম্পাদকের সাথে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'লোকজনের ভীড়ে সাধারণ সম্পাদক (লিটন) কী বলতেছিলো সেটা খেয়াল করতে পারিনি। সারা রাত জেগে প্রোগ্রাম করাতে এ সমস্যা হইছিলো।'
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতা লিটনের বক্তব্য অনুসারে বঙ্গবন্ধু তার জন্মেরও দুই বছর আগে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে বিয়ে করেছেন। একজন ছাত্রনেতা হিসেবে এধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেওয়া চরম মাত্রায় লজ্জাকর।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, 'ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে নেতা হলেই পড়াশোনা বন্ধের ধারা তৈরি হচ্ছে। নেতা হওয়ার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। না হলে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ছাত্ররাজনীতিতে অশুভ সূচনা করবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৪৫ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'যেই মহান ব্যক্তিত্বের কারণে আমরা স্বাধীন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি, সেখানে এ ধরনের ছাত্রনেতা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। জাতির পিতার ইতিহাস সম্পর্কে যে ছাত্র উদাসীন সে কি করে ছাত্রলীগের নেতা হয় তা বোধগম্য নয়।'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: