জাবিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতির প্রতিবাদ বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের

মান্নান, জাবি প্রতিনিধি | ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১৫:০৯

ছবিঃ সংগৃহীত

বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্ষদের নির্বাচন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।

১৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠানেরও দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষক গ্রুপ কর্তৃক গত ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রচারিত একটি বিবৃতি আমাদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। আমরা উক্ত বিবৃতিটি কোনভাবেই বস্তনিষ্ঠ বলে মনে করতে পারছি না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তারা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।' "বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রধান পৃষ্টপোষক অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে দ্বিতীয় মেয়াদেও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি ২০১৫ সালের অক্টোবরে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন, ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিন নির্বাচন, একই বছরের জুন মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন, অর্থ কমিটি ও শিক্ষাপর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন।" জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো উপাচার্যের সময় এক মেয়াদে এতগুলো প্রশাসনিক পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বলে এতে দাবি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের দেওয়া বিবৃতিতে, বিভিন্ন পর্ষদের নির্বাচন সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের দেওয়া বক্তব্যকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য অভিহিত করা হয়।

নির্বাচনগুলো না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের করা রিট, সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমির হোসেনের 'অসহযোগিতা' ও উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন এবং করোনা মহামারির প্রকোপকে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির তাঁর 'ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণ স্বার্থ' হাসিলের লক্ষ্যে ১৯৭৩ অধ্যাদেশ-এর প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা না দেখিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন যা মহামান্য আচার্যের আদেশকে অবজ্ঞা করার 'হীন' চেষ্টা । উক্ত রিটের আইনগত নিষ্পত্তি অদ্যবধি হয় নি। সে অর্থে অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবিরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুসারে পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারী কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘমেয়াদী অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং এখনো আছেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের 'বদান্যতায়' অধ্যাপক কবীরের অনুসারী অধ্যাপক আমির হোসেন প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) পদে নিযুক্ত হলেও 'হীন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে উপাচার্যকে সহযোগিতা করেননি'। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচিতে উপাচার্যের সাথে উপস্থিত থাকার সামান্য সৌজন্যতাবোধও দেখাননি। এমনকি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মহান বিজয় দিবসে উপাচার্যের সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি।

বিবৃতি অনুযায়ী, মহামারীর সময়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সম্মানিত সকল শিক্ষকের অংশ গ্রহণে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেবার কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি মাইলফলক অর্জন করে, যা মহামারী সময়ে দেশের অন্য কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে সক্ষম হয়নি। তাঁর সময়ে প্রণীত যুগান্তকারী দুর্যোগকালীন অধ্যাদেশ চলমান কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল ও সেশন জোট মুক্ত রেখেছে এবং যেকোন দুর্যোগকালীন পরিস্থতিতে ভবিষ্যতেও রাখবে ।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, 'সকলকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে আমরা শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চাইনি। মহামারী পরিস্থিতি নিম্নগামী হওয়ায় বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে শারিরীকভাবে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। উক্ত নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।' "তবে নির্বাচন করলে যে আমাদের অনেকেই আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি সেটা গত শিক্ষক সমিতি নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে প্রমানিত হয়ে গেছে। উক্ত নির্বাচনের পরপরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সম্মানিত শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের অনেকেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া সাপেক্ষে সকল নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।"



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: