ডজন খানেক মামলার আসামী জামাল হোসেন আ. লীগের উপ কমিটিতে

সময় ট্রিবিউন | ১৪ আগষ্ট ২০২১, ০২:২৫

জামাল হোসেন মিয়া

হত্যা, অস্ত্র, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ প্রায় একডজন মামলায় আসামী জামাল হোসেন মিয়া এখন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির সদস্য। জানা যায়, জামাল হোসেন একসময় আওয়ামী লীগের কর্মী থাকার সুবাদে সাজেদা চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জামালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অপকর্মের কারনে অল্পদিনের মধ্যেই তাকে বাদ দেয়া হয়।

সম্প্রতি চুরি করা গাড়ি বিক্রির অভিযোগে চট্রগ্রামের আকবর শাহ থানায় মামলা করেন সালাহ উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। এই মামলায় ২ নম্বর আসামী করা হয় এই জামাল হোসেন মিয়াকে। মামলার প্রধান আসামী জবানবন্দীতে জামাল হোসেন মিয়ার কথায় এমন কাজ কছে বলেও সাক্ষ্য দিয়েছে বলে সুত্র জানিয়েছে।

বেপরোয়া এই জামালের নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর নগরকান্দায় তালমার মোড়ে সংসদ উপনেতার গাড়ীতে হামলা করা হয়। উক্ত ঘটনায় নগরকান্দা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। জামাল-কামালের বাহিনী তালমার স্কুলছাত্র অন্তর ও শাহজাহান হত্যার সাথে জড়িত বলেও পুলিশের তথ্যে উঠে এসেছে।

এই হত্যাকান্ডের পর ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথা নির্বাচনী এলাকায় ভয়ংকর হিসেবে পরিচিত জামাল-কামাল বাহিনীর হাতুড়িপেটায় মারা গেছেন সোবহান মাতুব্বর (৫০) নামের
আরও এক ব্যক্তি। নিহত সোবহান নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বাসিন্দা। জামাল-কামাল বাহিনীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে নিরীহ সোবহানকে। ১২ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানতে হয় তাঁকে। সোবহান মাতুব্বর নিহতের ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সোবহান মাতুব্বর হত্যায় জড়িত জামাল-কামালের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা।

নগরকান্দা ও সালথায় জামাল-কামাল বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এতটাই বেপরোয়া যে তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ টুঁ শব্দ করতে সাহস পায় না। এর আগে এই জামাল ঢাকার বাড্ডা থানায় অস্ত্রসহ আটক হয়েছিল। তখন প্রভাব খাটিয়ে রেহাই পেলেও পুলিশের তালিকায় তার অবস্থান অস্ত্রধারী হিসেবে। জামাল-কামাল বাহিনীর অত্যাচারে নগরকান্দা-সালথার অনেকেই এলাকা ছেড়ে বর্তমানে ফরিদপুর ও ঢাকায় বসবাস করছে। এ বাহিনীর সদস্যরা প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাগে পেলেই হামলে পড়ে।

এই সব অভিযোগ থাকার পরেও কেন আওয়ামী লীগের উপ কমিটিতে রাখা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “আওয়ামী লীগে কি লোকের অভাব পড়েছে যে নানা অভিযোগে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদে আনতে হবে? অনেক ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাদের জায়গা হয় না অথচ খুন খারাপি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের এখানে জায়গা দিতে হয়, পদ দিতে হয়? এদের দলে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।”

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক থাকা সময়ে তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটিতে সদস্য পদে আসেন জামাল হোসেন মিয়া।

তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে সেলিম মাহমুদ দায়িত্ব পাওয়ার পরে ২০২১ সালের উপ কমিটিতে আবারও নাম লেখান এই জামাল হোসেন মিয়া।
এ বিষয়ে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, “ এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সে গত কমিটিতে ছিল। এবার কমিটি করার সময় আমার আগের সম্পাদক ১৫ জনের নাম দিয়েছে তার মধ্যে জামাল হোসেন মিয়ার নামও ছিল। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটিতে সে আছে।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর