আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে গড়ে উঠা অসংখ্য ভূঁইফোঁড় সংগঠন নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে খোদ আওয়ামী লীগ। কোনভাবেই যেনো সামাল দেওয়া যাচ্ছে না এসব রাজনৈতিক দোকান এবং দোকানদারদের। সম্প্রতি চাকুরীজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন খুলে দল থেকে বহিস্কার পর্যন্তও হয়েছেন মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। তখন থেকেই আলোচনায় আসে এসব নাম সর্বস্ব ভূঁইফোঁড় সংগঠন। আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড এরকম ৭৩ টি সংগঠনের তালিকা পেয়েছে। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এসব রাজনৈতিক দোকান নিয়ে আলাদা আলাদা মন্তব্যও করেছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে "বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ" নামের একটি দল এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ মনির খান। মনির খান কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কোন এক উপ কমিটির সহ সম্পাদক দাবী করেন। এছাড়াও অটিজম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস সোসাইটি'র চেয়ারম্যানও তিনি।
ঢাকা ২ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাওয়া এই মনির খান সম্পর্কে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে সময় ট্রিবিউনের হাতে। সাদা পাঞ্জাবীর উপর কালো মুজিবকোট পরা অবস্থাতেই তাকে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। আর বিভিন্ন সময় বুকে নৌকার ব্যাজ কিংবা সোনালী রঙের ছোট একটি নৌকা গাথা থাকে তার পোশাকে। চলনে বলনে, পোশাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুকরণ করতে কম যান না তিনি। তবে তার নেই কোন প্রকার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড। যদিও নিজেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন মাদারীপুরের এই মনির।
জানা যায়, মনির খান এক সময় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসের ঠিক বিপরীত পাশে একটি টেইলার্সে দর্জির কাজ করতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এবং যুবলীগের কয়েকজন নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মনির খান তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সঠিক তথ্য সময় ট্রিবিউন কে জানাতে পারেন নি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনুমোদিত কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের কোথাও তার কোন প্রকার পদ পদবী নেই, নেই ছাত্ররাজনীতি করার কোন ইতিহাস।
মূলদলের বা অঙ্গসংগঠের কোন পদ পদবি না থাকলেও এই হাইব্রীড নেতা হর হামেশাই চলে যান প্রধানমন্ত্রীর একেবারে সন্নিকটে। একেবারে প্রধানমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে বসা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে উঠানো এসব ছবি পুঁজি করেই তিনি তার ধান্দাবাজির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছেন। তার বিপক্ষে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পদ পদবী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে একাধিক নারীর সাথে কেলেঙ্কারীর অভিযোগও রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রমাণ সময় ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।
তার কাছে "বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ" এর বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সময় ট্রিবিউন কে জানান, 'যায়গামতো' থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি এই সংগঠন চালাচ্ছেন। তবে 'যায়গামত' বলতে কি বুঝিয়েছেন তার বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি তিনি। মনির খান আরও বলেন, এর আগেও অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে তার সংগঠনকে। এসব বিষয়ে অবগত হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এনএসআই এবং ডিজিএফআই দিয়ে তদন্ত করেও এ সংগঠনের কোন বিচ্যুতি পাননি, তাই বন্ধও করেননি।
তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বেশ নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এসব নাম সর্বস্ব ভূঁইফোঁড় সংগঠনের ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।
মাস খানেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ শেখ হাসিনা পরিষদের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। যেখানে শেখ হাসিনা পরিষদ ও দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, "অতি শিগ্রই আমরা এ ধরণের ভূইফোর সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।"
এদিকে থেমে নেই হাইব্রীড মনির। মনির খান বলেন, তার এ সংগঠন ৬৪ জেলায় এমন সমাবেশ করার ক্ষমতা রাখে যা আওয়ামীলীগের অনেক অঙ্গসংগঠনই রাখে না। খুব দ্রুত ৬৪ জেলার নেতাকর্মী নিয়ে তিনি ঢাকায় একটা মহাসমাবেশে করাও ইঙ্গিত দেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: