বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে হিংসা বিদ্ধেষ দূর করে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তাছাড়া জনগনের পাশে থেকে জনগনের প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতিই করলেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতি স্বার্থক হবে। এক্ষেত্রে পদ পজিশনের জন্য পাগল হওয়া জরুরী নয় বরং জনগনকে ভালবাসতে হবে যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগে সম্মেলনের মাধ্যমে নেত্রী থানা পর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাকে নির্বাচিত করবেন তাকেই মানতে হবে সবার। শনিবার দুপুরে (৩রা সেপ্টেম্বর) ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে ঐতিহ্যবাহী ডেমরা থানাসহ ৬৪,৬৬,৬৭,৬৮,৬৯ ও ৭০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি—বার্ষিক সম্মেলন—২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা—৫ আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা অনেক জনপ্রিয় ছিলেন তার আসন এলাকাসহ দলীয়ভাবে। আমরা জেলে থাকা অবস্থায় মোল্লা সাহেব খাবার নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগের দূর্দিনের নেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। ডেমরায় আপনারা যারা নেতা হতে চান তারা হাবিবুর রহমান মোল্লাকে দেখেন কিভাবে তিনি রাজনীতি করতেন। মোল্লা ভাই রিকশায় চলতেন, পাজেরো বা বড় বড় গাড়িতে চলতেন না। তিনি তৃনমূলের নেতাকর্মীসহ মানুষকে ভালবাসতেন। রাজনীতি করা অবস্থায় দেখেছি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। তবে এখন যারা নেতা হতে চান তারা বড় বড় গাড়ি হাকিয়ে চলার চেষ্টা করছেন যা আওয়ামী লীগ পছন্দ করেনা। ত্যাগী ও মানুষের ভালবাসার পাত্ররা দাপট দেখায় না বরং দাপট তারাই দেখায় যারা নব্য আওয়ামী লীগে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এসেছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের কি দৌড় সালাউদ্দিনের কথা মনে আছে? তিনি শুধু দৌড়ের ওপরেই আছেন। ঢাকা—৫ আসনে তার সন্ত্রাসী রাজত্বের পতন ঘটিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণপ্রিয় নেতা আমাদের মোল্লা ভাই। তাই এখনো ডেমরায় নৌকার পাগল সবাই। আপনারা আওয়ামী লীগের পক্ষে দৌড়ানোর জন্য রেডি হয়ে যান এখনি। যে কোন মূল্যে দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে হবে। আর প্রতিটি ওয়ার্ডে শক্তিশালীভাবে কমিটি গঠন করতে হবে। ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে হবে।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খাঁন মাসুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পেরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সহ—সভাপতি মিজবাহুর রহমান ভঁূইয়া রতন, শরফুদ্দিন আহমেদ সেন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস কে বাদল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদস্য সালাউদ্দিন বাদল প্রমূখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল মোল্লা, ৬৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান পলিন, ৬৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সালাহ উদ্দিন, ৭০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, ৬৬ নং ওয়ার্ডের সভাপতি পদপ্রার্থী হানিফ তালুকদার, বামৈল উত্তরের সভাপতি নাসির উদ্দীন, আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল খাঁন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিফাত সাদেকীন চপল, ৭০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবু, আরিফুর রহমান আরিফ, বাকী বিল্লাহসহ ডেমরা যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে মির্জা আজম বলেন, ক্লিন ইমেজের নেতাদের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে হবে। কোনো ধরনের বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, চাদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের স্থান দেয়া যাবে না। মনে রাখবেন, একজন দুর্নীতিবাজকে কমিটিতে রাখবেন, সে ২০ জন দুর্নীতিবাজকে স্থান দিবে। একজন চাদাবাজ বিশজন চাদাবাজকে স্থান দিবে।
মহানগরের ওয়ার্ড ও ইউনিট এখন আগের থেকে শক্তিশালী উল্লেখ করে মির্জা আজম বলেন, আজ ডেমরা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ার আগে কিন্তু দেখা যায়নি। কিছু দিন আগে ঢাকা —৫ আসনে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আমি সমন্বয়ের দায়িত্বপালন করেছিলাম। সেদিন কিন্তু এমন জোয়ার আমাদের চোখে পড়েনি। কিন্তু আজ দেখলাম। আগে ওয়ার্ড ইউনিট সম্মেলন হয়নি। সেই কাজ আমরা করতে পেরেছি। নেতাকর্মীদের জোয়ার সেই সম্মেলনের সুফল। আজ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন ইউনিট হিসেবে দুর্গ গড়ে উঠেছে।
ষড়যন্ত্রেরে বিরুদ্ধ সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সস্পাদক মির্জা আজম বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও দুদর্শি নেতৃত্বে আজ দেশের সব যায়গায় উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। গ্রাম—গঞ্জের রাস্তাঘাট আজ আর কাচা নেই। অথচ এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে আজ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেনো কোনো অপশক্তি রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করতে না পারে।
তারেক জিয়ার সমালোচনা করে মির্জা আজম বলেন, খুনী জিয়ার সন্তান তারেক রহমান বিদেশে বসে আওয়ামী লীগ সভপাতি শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। সে আগেও শেখ হাসিনাকে খুনের চেষ্টা করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: