আজ ১লা মার্চ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমির সামনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও মোমবাতি প্রজ্জলন কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রিপনের সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মিলন ঢালী।আলোচনা সভা ও মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচীতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন, সাংবাদিক তুহিন ওয়াদুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শাহীন সিকদার, মুহাম্মদ নুর আলম সরদার, শহীদুল ইসলাম জীবনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচীর শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে আলোচনা সভায় গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু বলেন, "বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ তাঁর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিবো না। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি পাকিস্তানের দোসররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।"
সংগঠনের সভাপতি মিলন ঢালী বলেন, "বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদরা আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর আহবানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। এই লাল সবুজের পতাকার সম্মান আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে এই মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে হাজার হাজার লাশ ফেলে রেখেছিল। তরুণ প্রজন্মের সামনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার ইতিহাসগুলো তুলে ধরবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, "একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নিজে মিরপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। হাজার হাজার নিরীহ বাঙালির লাশ এই জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল। রাজাকারদের পরাজিত করে মিরপুরকে আমরা ৩০ জানুয়ারী স্বাধীন করেছিলাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতিগুলো আমরা এখনো ভুলিনি। পাকিস্তানকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে।"
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, "অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মিরপুরে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে লাশ ফেলা রাখা হয়েছিল। একাত্তরে নৃশংস গণহত্যার অপরাধে পাকিস্তানকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার করেছেন। এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তি দোসররা এখনও সক্রিয়। পাকিস্তান আইএসআইয়ের এজেন্ট ছিল জিয়াউর রহমান। একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানের দোসররা। এরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এখনো নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। আমাদেরকে সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এদের রাষ্ট্র বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। রাজাকার এবং এদের বংশধরদের তালিকা প্রকাশসহ নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
সাংবাদিক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, "অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও আলোচনা সভা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তরুণ প্রজন্মের সামনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার ইতিহাসগুলো প্রতিনিয়ত তুলে ধরতে হবে। বধ্যভূমি ও গণহত্যার স্মৃতিচিহ্নগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: