দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলে মনে করেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন ড. কামাল। ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত’ শিরোনামে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় ঐক্যের কথা বলেছি। দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যের কথা আবার বলছি। দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে ঐক্য করুন। দেশ ও জাতি আজ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে, দেশের মালিক জনগণ। তাই দেশ জনগণের হাতেই তুলে দিতে হবে। নির্বাচনে কালোটাকার খেলা বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ ১০ জানুয়ারি আমার জীবনের স্মরণীয় দিন। এ দিনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরেছি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়েছিলেন, তা আজ অনেক দূরে। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রক্ষা করতে আবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’
গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নেতা বা ব্যক্তির পিতা নন। তিনি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু জনমতকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ চালিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ তাঁকে পুঁজি করেই চলছে।’
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে জাতির কাছ থেকে। জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে দলীয় স্বার্থে দলের নেতা বানানো হচ্ছে। তাঁকে জাতির নেতা হিসেবেই রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে দলীয়করণ করা হচ্ছে বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবু সাইয়িদ। তিনি বলেন, ‘তাঁকে এখন এমনভাবে ছোট করা হচ্ছে, মনে হয়, তিনি যেন একটা পরিবারের লোক।’
দেশে এখন কোনো বুদ্ধিজীবী নেই মন্তব্য করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সরকারে যারা বসে আছে, তারা লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে কথা বলার জন্য। জনগণের পক্ষে কথা বলার লোক নেই। সিভিল সোসাইটি একটি বিশাল শক্তি। অথচ সিভিল সোসাইটি কথা বলতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, দেশে বিরোধী দল যেমন দরকার, সিভিল সোসাইটিরও তেমন দরকার। কিন্তু দেশে বিরোধী দলকেও মাথাচাড়া দিতে দেওয়া হচ্ছে না, আবার বুদ্ধিজীবীদেরও বেচাকেনা চলছে।
গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে গুরুত্ব, তা আওয়ামী লীগই শেষ করে দিয়েছে। তিনি বাঙালিকে এমনভাবে ভালোবেসেছেন, যার মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আজ দেশের মানুষের জন্য নয়, লুটেরাদের জন্য হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু মানুষের ভোটাধিকারের জন্য লড়েছেন। আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ভোটাধিকার লুট করেছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশের সব সরকারি অফিস দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।
গণফোরামের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মহসিন রশিদ বলেন, একজন নেতার মধ্যে যে গুণ থাকা দরকার, তা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। যাঁরা এখন রাজনীতি করছেন, তাঁদের মধ্যে এ গুণ অনুপস্থিত। বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতেন। আর এখনকার রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনে জেতার কথা ভাবেন শুধু।
অনুষ্ঠানে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজর (অব.) আসাদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: