জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশে ফিরেছেন

মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ | ২ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৩০

ফাইল ছবি

বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন সারথি, রাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর দেশ, জাতি, জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পিতার মত বলিষ্ঠ কণ্ঠে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে আজ দেশে ফিরছেন জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ কন্যা স্বাধীন বাংলাদেশে পিতার মতোই সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ পালিত হয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। গোপালগঞ্জের মধুমতি বিধৌত ছায়া সুনিবিড় টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টম্বর জন্মগ্রহণ করেন আজকের সবচেয়ে সফল ও ভিশনারি নেতা শেখ হাসিনা। জন্মের পর তিনি দেখেছেন হিমালয়সম পিতার সংগ্রামী জীবন। তখন কে জানত এই সংগ্রামই তার সঙ্গী হবে জীবন জুড়ে। পিতা-মাতা স্বজন হারানোর সীমাহীন বেদনার মাঝেও তিনি অসীম সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে লড়াই করেছেন। তিনি বাংলার জনগণের মাঝেই খুঁজে নিয়েছেন স্বজনদের-দেশের মানুষের জন্য সঁপে দিয়েছেন জীবনের সবটুকু সময়, তিনি অবিরাম ছুটে চলেছেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য অগ্রযাত্রায় সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, ভিশনারি নেতৃত্বে। মানবিক সম্পন্ন এই মানুষটি জনতার নেত্রী, আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা শুভ জন্মদিন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি। এ অর্জন অনন্য ও অতুলনীয়।

# তিনি টানা ৪০ বছর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি
# ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন
# ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিপন্ন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের সঠিক ধারায় এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন
# ৩১ টি বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন এবং চল্লিশটির অধিক বই লিখেছেন
# বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে
* নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো উন্নয়নে এক নবজাগরণ ঘটিয়েছেন।
* ১২ বছর পূর্বের মাথাপিছু আয় কে চার গুণ বৃদ্ধি করে ২২২৭ ডলারে উন্নীত করেছেন।
* দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের রেকর্ডে উন্নত করে ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন।
* HDI সহ সকল INDEX এ বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন।
* ৫৭ তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর সফল উৎক্ষেপণসহ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে।
* সমুদ্র বিজয় (BLUE ECONOMY), দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে প্রবেশ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, ICT ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়নসহ সফলভাবে করোনা মোকাবেলা করে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।
* খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সহ বৃহত্তর কৃষির সকল সেক্টরে এসেছে এক অভাবনীয় সাফল্য
* তিনি লক্ষ লক্ষ গৃহহীন মানুষকে গৃহ দিয়েছেন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফলতার পিছনে রয়েছে বেদনাবিধুর ইতিহাস, দুঃখ কষ্টের দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ১৯৭১ সালের ১৭মে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, জীবনকে তুচ্ছ করে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে ফিরেছেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে গিয়েছেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল সহ দেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। এরপর ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচন ছাড়া চতুর্থবারের মতো উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশ পরিচালনা করছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মধ্যেও তিনি জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি সংমিশ্রণ করে জিডিপি গ্রোথ, রপ্তানিসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন সমগ্র বিশ্ব আজ বিস্ময়ে দেখছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ, স্যানিটেশন সহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। যার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে বিশ্ব সম্প্রদায়ও। SDG বাস্তবায়ন অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে এক সমৃদ্ধ মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে অনন্য উচ্চতায়। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোন, মেধা, সততা, নিষ্ঠা, প্রখড় দক্ষতা এবং সৃজনশীল উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তার সফল ও ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালের আগেই একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হওয়ার। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, জঙ্গিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত, মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে। তিনি জাতির পিতার অসমাপ্ত সেই কাজ সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। তার এই মহান উদ্যোগে প্রতিটি কৃতজ্ঞ বাঙালির উচিত যার যার অবস্থান থেকে সততা, নিষ্ঠা ও একান্তভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে তার হাতকে শক্তিশালী করা।

শুধু করোনা মোকাবিলা নয় রোহিঙ্গা সংকটের মতো মানবিক সংকট মোকাবিলায় তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। সকল কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন তেমনি দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বসভায় জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন। নিয়েছেন কৌশলী পদক্ষেপ । ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেমন উন্নীত হয়েছে অনন্য উচ্চতায়, তেমনি চীন, জাপান, রাশিয়াসহ উন্নত দেশগুলোও আজ আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন এক অনন্য উচ্চতায় রাজনৈতিক নেতা, তেমনি একজন সৎ ও দক্ষ প্রশাসক। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে দেশকে জানতে হবে এবং সকল বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে। আমার নিজের প্রশাসনিক কর্মক্ষেত্রে দেখেছি একনেক সভা, প্রকল্প পর্যালোচনা সভা এবং আইন প্রণয়নের সংশোধনের নীতিগত অনুমোদন সহ সকল ক্ষেত্রে তিনি সবার চেয়ে বেশি তথ্যসমৃদ্ধ থাকেন। জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতা ও তথ্যের আলোকে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। সচিব বা কারো কথা শুনে তিনি অন্যান্য সরকারপ্রধানদের মতো সিদ্ধান্ত প্রদান করেন না। এক্ষেত্রে তিনি অনন্য। তার ৭৫তম জন্মদিনে তার প্রতি আবারো জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনের সাথে আরো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ বাঙালি জাতি আজ পালন করছে। একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং অপরটি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। আমরা সৌভাগ্যবান এ তিনটি উৎসব পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা উৎকণ্ঠিত হই স্বাধীনতা বিরোধীদের আস্ফালন দেখেন, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে তাদের উৎফুল্ল হতে দেখে এবং জামায়াত-বিএনপি'র অপপ্রচার দেখে। তাই আজ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির নিজেদের পরিশুদ্ধি এবং ঐক্য অত্যন্ত জরুরী। ক্ষুদ্র স্বার্থ ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শেখ হাসিনার সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের ছায়াতলে ইস্পাতকঠিন দৃঢ় মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সকলকে।

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃত অর্থে বাঙালির একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্রপতি। তিনি আমাদেরকে একটি রাষ্ট্র, লাল-সবুজের পতাকা এবং সংবিধান দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি উন্নয়নের সকল পাটাতন (ফাউন্ডেশন) করে গড়ে দিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বের মেহনতী মানুষের এই মহান নেতাকে আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মমতায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর বারবার আঘাত এসেছে। সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে, নেতাকর্মী ও জনগণের প্রচেষ্টায়, তিনি অবিরাম নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দুরন্ত দুর্বার গতিতে। তিনি আজ ১৭ কোটি মানুষের ভরসার স্থল, আস্থার প্রতীক। তিনি জনগণের আস্থা ও ভালবাসা নিয়ে পরম মমতায় সততা ও দক্ষতা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন- এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, উন্নয়নের জন্য। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মেহনতী মানুষের পক্ষে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর নেতা হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতার মতোই জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বর্তমান বিশ্বের সমসাময়িক বিষয় ভ্যাকসিন সহজলভ্যতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনসহ অন্যান্য বিষয়ে তার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। তিনি SUSTAINABLE DEVELOPMENT SOLUTION NETWORK(SDNS) কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছেন এবং অভিহীত হয়েছেন ক্রাউন জুয়েল (মুকুটমনি) হিসেবে। তিনি এবারে টেকনিক্যাল এডুকেশন এর ক্ষেত্রে সফলতার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি এসকল সম্মাননা এদেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন, আর অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী হয়ে দেশে ফিরছেন। এই মহান নেত্রীকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।

লেখক: সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর