ডলারের রেট এখন খোলাবাজারে চলে ১৩০ টাকা যা এক বছর আগেও ছিলো ৮৫/৮৬ টাকা। একজন ফল ব্যবসায়ী যখন বিদেশি ফল গত বছর আনতো ৮৫ টাকায় তখন সে লাভ রাখতো ৫ টাকা, এখন সে ১৩০ টাকা তেও ৫ টাকা লাভ রাখে, কিন্তু মাঝের এই ৪৫ টাকা সে নিজের পকেট থেকে অবশ্যই দেয় না। এটা যায় আমাদের পকেট থেকে। তাই Actual inflation আসলে দেশে অনেক অনেক বেশি।
- ডলারের রেট কেনো বাড়ে?
নর্মাল আর ১০ টা প্রডাক্টের Demand - Supply এর মত, সাপ্লাই কম আর ডিমান্ড বেশি হওয়া তে ডলারের দাম বাড়ছে।
- ডলারের সাপ্লাই কম কেনো?
দেশে ডলার আসে মূলত ৩ ভাবে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় আর দেশে যদি কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টরি খোলে বা ব্যবসা খোলে যা FDI (Foreign direct invest) নামে পরিচিত। এছাড়া আমরা অনেক সময় IMF, WORLD BANK থেকে লোন পাই। কিন্তু লোন তো লোন ই শোধ করা লাগে আজ হোক কাল হোক।
রপ্তানি আয়ে সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ আসলে একটা দর্জি বাড়ি। টেইলার্সে আপনি যেমন কাপড় নিয়ে যান টেইলর আপনার শার্ট প্যান্ট বানায় দেয় বাংলাদেশ ও সেইম। ওয়ালমার্ট থেকে ১০০ ডলারের শার্টের অর্ডার পাইলে শার্টের কাপড়, বোতাম এগুলা আবার বিদেশ থেকে আমদানি করতেই ৬০/৭০ ডলার চলে যায়, ডলার বাকি থাকে শুধু ৩০/৪০ ডলার।
সলিড ডলার হচ্ছে রেমিট্যান্স। কিন্তু দেশে রেমিট্যান্স এখন ম্যাক্সিমাম ই আসে হুন্ডি হয়ে।
- হুন্ডি জিনিস টা কি?
ধরলাম আজকে বাজারে ১ডলার = ১০০ টাকা। রহিম সাহেব একজন দুর্নীতিবাজ পলিটিশিয়ান/সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী / দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি দুর্নীতি করে ১ কোটি টাকা কামিয়েছেন। এখন এই টাকা টা দেশের কোন ব্যাংকে রাখা রিস্ক কারণ NBR / দুদক এর চোখে পড়তে পারে। তিনি দুবাই তে টাকা টা ট্রান্সফার করবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো ঝামেলা কারণ ব্যাংক অনেক প্রশ্ন করবে। উনি গেলেন দালালের কাছে। দালাল বললো আমি ৯০ টাকা করে আপনাকে ৯০ হাজার ডলার দিবো। রহিম সাহেব রাজি যেহেতু এই টা অবৈধ টাকা কিছু টাকা লস গেলে তার সমস্যা নাই। উনি ১ কোটি ক্যাশ টাকা দালাল কে দিলেন। এরপর দুবাই গেলেন ট্যুরিস্ট ভিসায়। যেয়ে দুবাইয়ের দালাল থেকে ৯০ হাজার ডলার বুঝে নিয়ে দুবাই তে একটা বাড়ি কিনে ফেললেন। বাংলাদেশি দালাল লাভ করলো প্রতি ডলারে ১০ টাকা করে।
- দুবাইয়ের দালাল ৯০ হাজার ডলার কোথায় থেকে পেলো?
দুবাইয়ের দালাল দুবাই তে কর্মরত সকল রেমিট্যান্স পাঠানো বাংলাদেশি দের বললো আমার মাধ্যমে টাকা দেশে পাঠাও। ব্যাংক ১০০ টাকা করে দিচ্ছে আমি ১০৫ টাকা দিবো। এর ফলে শ্রমিক ভাই রা তাদের জমানো ডলার গুলো দালাল কে দিয়ে দিলো। প্রবাসী যে কেউ ই যেখানে টাকা বেশি দিবে ঐ চ্যানেলেই টাকা পাঠাবে, সেটা আপনি আমি হলেও পাঠাতাম। বাংলাদেশী দালাল ১০৫ টাকা করে শ্রমিক ভাই এর ফ্যামিলি কে দিলো। এর পরেও সব কেটে কুটে দালালের লাভ থাকলো ৫ টাকা ডলার প্রতি। এখানে ৩ পক্ষ (দালাল, দুর্নীতিবাজ, প্রবাসী) সব পক্ষ ই খুশি আর ধরা খেলো সরকার আর সাধারণ জনগণ। এই হচ্ছে হুন্ডির মেকানিজম।
- ডলারের ডিমান্ড হাই কেনো এখন?
দেশে প্রতি নির্বাচনের আগে ডলারের ডিমান্ড হাই থাকবেই, দুর্নীতিবাজ রা ফিউচারে কি হবে এই ভয়ে অবৈধ টাকা বাহিরে পাঠাবেই।
- সলুশন কি?
সরকার যতই Cash incentive দিক না কেনো আসল সল্যুশন হচ্ছে দেশে দুর্নীতিবাজ ধরতে হবে। এই দুর্নীতিবাজ দের যদি ধরা যায় তাহলে এরা যদি দুর্নীতির টাকা পাঠাতে না পারে তাহলে হুন্ডির ক্যাশ ফ্লো বন্ধ হয়ে যাবে। পুরা চেইন ভেংগে পড়বে। তা না হলে আপনি যতই Cash incentive দেন রেমিট্যান্স এ দালালদের কাছে সব সময়ই অবৈধ টাকা থাকবেই। তখন ওরা ব্যাংকের রেটের চেয়ে ২-৪ টাকা হলেও বেশি দিবেই।
- ভুক্তভোগী কারা?
আমি আপনি।
- ভার্সিটি টিউশন ফি বাহিরে আগে ১০ লাখ লাগলে এখন লাগবে ১৮- ২০ লাখ।
- আপেল যদি ২২০ টাকায় কিনে থাকেন সামনের বছর ৪০০ টাকায় কিনবেন
- কারো যদি ২০ লাখ টাকা বাজেট থাকে গাড়ি কেনার ঐ টা ৩০ লাখে নিতে হবে
- আমদানি করে আনা প্রতিটি জিনিসের দাম ই হয়ে যাবে ডাবল। কারণ কোন ব্যবসায়ী ই লস দিয়ে ব্যবসা করবে না।
জিনিসপাতির দাম নির্বাচনের পরে আরো বাড়বে, ডলার সম্ভবত ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দেশে যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল দরকার, তেমনি দুর্নীতিবাজ দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও দরকার। কারণ দিনশেষে আমার আপনার দেশের ইনকাম থেকেই এই এক্সট্রা টাকা গুলো দিতে হচ্ছে।
লেখক- সিনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংক লিঃ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: