চীনে গত ১৭ মাস ধরে ছুটে চলা ১৪টি এশিয়ান হাতির জন্য কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। চীনের সরকারির কর্মকর্তাদের বরাতে মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বিবিসি।
গ্রামের পর গ্রাম ও শহরের পর শহর পেরিয়ে হাতির পালটি তাদের চলার পথে বহু ফসলের ক্ষেত তছনছ করে ছুটে চলায় ওই অঞ্চলটির বাসিন্দাদের সঙ্গে হাতিগুলোর দ্বন্দ্ব লাগতে পারে, এমন উদ্বেগ থেকে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নানা ধরনের যানবাহন ও ড্রোন ব্যবহার করে হাতিগুলোর যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে ২৫ হাজারের বেশি পুলিশ। হাতির পালটির গতিপথ সুরক্ষিত রাখতে হাতিগুলো যেদিক দিয়ে গেছে সেদিকের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করছে তারা।
হাতির পালটি তাদের আদি বাসভূমি থেকে ৫০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে চীনা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হাতিগুলোর সংবাদ করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবাস ছেড়ে বুনো হাতির এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার কোনো ঘটনা তাদের জানা নেই।
প্রথম থেকে হাতির পালটির গতিবিধি নজরদারি করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। গত জুনের দিকে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং শহরতলীতে হাতিগুলোকে ঢুকতে দেখা যায়। এখন স্থানীয় বসতির দিকে অগ্রসর হওয়া দেড় লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতিবিধি ঘুরিয়ে হাতিগুলোকে ইউনানের শিশুয়াংবান্নায় মেঙ্গিয়াংজি নেচার রিজার্ভে তাদের পুরোনো আবাসস্থলের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে পরে হাতিগুলোই তাদের গতিপথ বদলে পুরোনো আবাসের দিকে যেতে শুরু করে।
হাতির পালটির নজরদারির জন্য নিয়োজিত দলের প্রধান ওয়ান ইয়ং সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, হাতিগুলো ইউয়ানজিয়াং নদী পার হয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে। হাতিগুলোর যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন রাখতে কৃত্রিম সড়ক, ইলেক্ট্রিক বেড়া ও লোভনীয় বস্তু ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতিগুলো কেন তাদের আদি আবাসস্থল ছেড়ে এমন এক যাত্রা শুরু করেছে সেটা তারা বুঝতে পারছেন না। তাদের কারো কারো ধারণা, অনভিজ্ঞ নেতার পাল্লায় পড়ে হয়তো তারা পথ হারিয়েছে। কেউ বলছেন, হাতিগুলো নতুন আবাসের খোঁজ করছিল।
এশীয় প্রজাতির হাতিকে বিশ্বের বিপন্ন একটি হাতি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনে এখন এই বন্য হাতির সংখ্যা মাত্র ৩০০টি। বেশিরভাগের আবাস দক্ষিণাঞ্চলের ইউনান প্রদেশে। বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতেই চীন সরকার এমন শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: