সিরিয়ার নির্বাচন আয়োজন করতে চার বছরের মতো লাগতে পারে : আহমেদ আল-শারা

সময় ট্রিবিউন | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৫

ছবি-সংগৃহীত

সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, দেশটিতে নির্বাচন আয়োজন করতে চার বছরের মতো লাগতে পারে।

রোববার সম্প্রচারিত হওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি বলেছেন। চলতি মাসের প্রথমদিকে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচী নিয়ে মন্তব্য করলেন শারা।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আল আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ণে তিন বছরের মতো লাগতে পারে আর দেশে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে প্রায় এক বছরের মতো লাগতে পারে।

৮ ডিসেম্বর কট্টরপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার বিদ্রোহী জোট রাজধানী দামেস্ক দখল করে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এইচটিএসের নেতা শারা দামেস্ক দখলের এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

এইচটিএস তাদের জঙ্গিবাদী অবস্থান থেকে সরে এসেছে, সিরিয়ার নতুন সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার যখন চেষ্টা চালাচ্ছে তার মধ্যেই এসব মন্তব্য করলেন শারা।

এই গোষ্ঠীটির বিদ্যুৎগতির অভিযানে সিরিয়ায় ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ অবসান হলেও বহু জাতির এই দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন ঝুলে আছে। এখানে তুরস্ক ও রাশিয়াসহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলির শক্তিশালী ও সম্ভাব্য প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ রয়েছে।

রয়টার্স বলছে, সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের অবসানকে পশ্চিমা শক্তিগুলো ব্যাপকভাবে স্বাগত জানালেও এইচটিএস কঠোর শরিয়া আইন চালু করবে না নমনীয়তা দেখাবে ও গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে, তা পরিষ্কার হয়নি।

শারা জানান, একটি জাতীয় সংলাপ সম্মেলনে এইচটিএস (আগে নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল) বিলুপ্ত করা হবে।

এই বিষয়ে জানাতে চাওয়া হলে শারা বলেন, “অবশ্যই। গোষ্ঠীগত ও মিলিশিয়া মানসিকতা দিয়ে একটি দেশ চালানো যায় না।”

একসময় ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদার সঙ্গে এইচটিএসের সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পরে তারা উভয়ের সঙ্গে ত্যাগ করে নিজেদের সংযমী একটি গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা বারবার সিরিয়ার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছে।

আর দেশটির সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর আশঙ্কা, নতুন শাসকরা ইসলামপন্থি সরকার চাপিয়ে দিতে পারে ও সাম্প্রদায়িক বিবাদ উস্কে দিতে পারে।

শারার ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংলাপ সম্মেলনে সিরিয়ার সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে এবং পার্লামেন্ট ও সংবিধান বিলুপ্ত করার মতো ইস্যুগুলোতে ভোট হবে।

সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির বিষয়ে শারা বলেছেন, রয়ে যাওয়া বিরোধগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দিস সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসসহ (এসডিএফ) সব দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, “তুরস্কের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য সিরিয়ার কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) প্ল্যাটফর্ম হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করি আমরা।”

তিনি বলেন, অস্ত্র শুধু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত আর যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে সক্ষম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের স্বাগত জানাবে।

সাক্ষাৎকারে শারা জানান, রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে।

এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সমঝোতামূলক ইঙ্গিতের পুনরুক্তি করলেন যা তার সরকার আগেই করেছিল।

চলতি মাসেই শারা বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিন্ন স্বার্থভিত্তিক।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, সিরিয়ায় থাকা রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি দামেস্কের নতুন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার বিষয় হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সিরিয়ার ওপর আরোপ করে রাখা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে, এমন আশাও প্রকাশ করেছেন শারা।

এইচটিএসের এই নেতার মাথার মূল্য হিসেবে এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে রেখেছিল ওয়াশিংটন; চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক দামেস্ক সফর করে যাওয়ার পর মার্কিন সরকার সেটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: