প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ইমরান খান সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি এখন তা ভুলে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মির।
বুধবার যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ানের মতামত কলামে এভাবেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমালোচনা করেন তিনি।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সমালোচনা করার কয়েক দিন পর পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মিরের সঞ্চালিত একটি টেলিভিশন টক শো বাতিল করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ হামিদ মির লিখেছেন, এক সময় ইমরান খান আর আমি দুজনই পাকিস্তানের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে লড়ছিলাম। ২০০৭ সালে যখন সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ জরুরি অবস্থা জারি করেন, তখন আমার টেলিভিশনে উপস্থিত হওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। তখন যে কজন রাজনীতিক তার প্রতিবাদ করেছিলেন, তার মধ্যে ইমরান খানও একজন।
সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘তখন আমি টক শোকে একেবারে ইসলামাবাদের সড়কে নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষ সরাসরি এসে দেখত লাইভ শো। তখন ইমরান খান নিয়মিতই আমার টক শোতে আসতেন। তিনি তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হব, সাংবাদিকরা সত্যিকারের স্বাধীনতা পাবে’।’
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে নিজ বাড়িতে পাকিস্তানি সাংবাদিক আসাদ আলী তুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক আয়োজনে দেশটির সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সমালোচনা করেছিলেন হামিদ মির।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্টরা ওই নির্যাতন চালিয়েছিল বলে সাংবাদিক আসাদ আলীর অভিযোগ।
নিজের টক শোতে ওই ঘটনার সমালোচনা করে হামিদ মির বলেন, ‘আমাদের আঘাত করতে তোমরা যদি আমাদের বাড়ি ভেঙে ঢুকে পড়ো, ভালো কথা, আমরা তোমাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবো না কারণ তোমাদের ট্যাংক আর বন্দুক আছে, কিন্তু আমরা বিষয়গুলো প্রকাশ করে দিতে পারি, তোমাদের বাড়ির ভিতরের বিষয়গুলো।’
এ বিষয়ে তিনি লিখেন, বক্তব্যে হামলাকারীদের আমি হুশিয়ার করেছিলাম। বলেছিলাম, যদি এভাবে বাড়িতে ঢুকে আমাদের পেটানো হয়, আমরা শান্ত হয়ে বসে থাকব না। আমি কোনো ব্যক্তি কিংবা সংস্থার নামও নেইনি। এটাই আজ পাকিস্তানের বাস্তব ট্রাজেডি। এই দেশটি এখন সম্পূর্ণ অচেনা লোকরা চালাচ্ছে। তারা কারা, সেটা প্রত্যেকেই জানে, কিন্তু তাদের নাম নেওয়ার সাহস কারও নেই। ছায়ার মধ্যে থেকে তারা এখন জবাবদিহিতার ঊর্ধে।
গত এক বছরে পাকিস্তানে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ১৪৮টি ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন হামিদ মির।
ইমরান খানের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, ১৪ বছর আগে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা কি তার মনে আছে। তিনি কি এখন সাংবাদিকদের পক্ষে দাঁড়াতে চান আগের মতো। নাকি তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার শত্রুদের পক্ষেই অবস্থান নেবেন?
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: