ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের প্রশ্নে একটি প্রস্তাব পাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি খসড়ার সারসংক্ষেপ তৈরির বিষয়ে যে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছিল, তা আরও দীর্ঘায়িত হলো বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
প্রস্তাবের খসড়া তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে শুক্রবারও (২২ ডিসেম্বর) অচলাবস্থা কাটেনি। তবে দেশটি বলছে প্রস্তাবনার খসড়ার বর্তমান যে রূপ রয়েছে, তাতে তারা সমর্থন করতে প্রস্তুত। খবর এএফপির।
দীর্ঘায়িত এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবের সর্বশেষ যে খসড়াটি তৈরি হয়েছে, তাতে অতিদ্রুত সময়ে নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে গাজায় মানবিক সাহায্য তৎপরতার অনুমোদন দিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই খসড়ায় দুপক্ষের মধ্যে শত্রুতার টেকসই সমাপ্তির লক্ষ্যে পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রস্তাবটি যে অবস্থায় রয়েছে, তা যদি সামনে নিয়ে আসা হয় তাহলে আমরা তা সমর্থন করতে পারি।’ তবে খসড়া প্রস্তাবটি শিখিল করা হয়েছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
লিন্ডা থমাস আরও বলেন, ‘এই খসড়া প্রস্তাবটি খুবই শক্তিশালী এবং এতে আরব দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকায় এবং উদ্বেগজনকভাবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটেনে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে কূটনৈতিক বাকবিতণ্ডার মাঝে গত বুধবারও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোগে সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে সমঝোতার প্রশ্নে সবাইকে নমনীয় হতে খসড়া প্রস্তাবটিতে আলোকপাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। প্রস্তাবে নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে এবং দুপক্ষের মধ্যে শত্রুতার একটি টেকসই সমাপ্তির লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত লানা জাকি নুসেইবেহ বলেন, ‘মূল বিষয়বস্তু সামনে রেখে দেশগুলো সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে কূটনীতিতে সময় লাগে।’
নুসেইবেহ আরও বলেন, ‘যদি এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়, তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। এ বিষয়ে ব্যর্থতার জন্যও পরিষদকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।’
এই প্রস্তাবের পক্ষে সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছাতে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে অনেক দর-কষাকষি করতে হচ্ছে। আর ভোট প্রদানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গত সোমবার থেকে এই প্রস্তাব বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে।
এই যুদ্ধের শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ভেটো ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটির বিরোধিতা করছে এবং ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাবগুলোতে ভেটো প্রদান করে আসছে। আর সাম্প্রতিক দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই, এমনটা জানিয়েছে একটি কূটনৈতিক সূত্র।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবারও বলেছেন, হামাসকে ‘নির্মূল’ না করা পর্যন্ত তার দেশ যুদ্ধবিরতিতে যাবে না।
তবে গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। আর এতো কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের মধ্যে জাতিসংঘের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির প্রতিটি লোক আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে।
বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ এবং গাজার কেউই না খেয়ে থাকার হুমকি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। আর এজন্যই আমরা সেখানে অতিদ্রুত মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে, ইসরায়েল অবিরাম আকাশ ও স্থলপথে ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের সরকারি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে আট হাজার শিশু এবং ছয় হাজার ২০০ জন নারী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: