ভারতীয় উপমহাদেশ অন্যতম ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রীর নাম নরেন্দ্র মোদি। ফলে তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার জন্য দৈনিক খরচ করা হয় এক কোটি ৬২ লাখ ভারতীয় রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তার নিরাপত্তার জন্য ৫৯২.৫৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
ভারতে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি নিরাপত্তা পান মোদি। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অর্থাৎ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তাকে পাঁচ বছরের জন্য এই বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। প্রাক্তন হওয়ার পাঁচ বছর পর এই এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে আনন্দবাজার। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নিরাপত্তা বলয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় থাকে। কনভয়ের প্রথম গাড়িটি দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তাকর্মীর। এই গাড়িতে সাইরেন থাকে।
দিল্লি পুলিশের গাড়ির পর থাকে এসপিজির গাড়ি। তারপরে থাকে আরও দু’টি গাড়ি। এরপরে আরও দু’টি গাড়ি থাকে। যার একটি থাকে বাম দিকে। অপরটি ডান দিকে। আর মাঝে থাকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দু’দিক থেকে ওই দু’টি গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর গাড়িকে ঘিরে থাকে। যাতে সহজেই কেউ প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির কাছাকাছি আসতে না পারে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা জোরদার করতেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার্থে এসপিজির বিশেষ নিরাপত্তা দল মোতায়েন করা হয়। এক হাজার জনেরও বেশি কমান্ডো থাকেন সে দলে।
জনসমক্ষে কোনো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গেলে, তাকে ঘিরে থাকেন এসপিজি কমান্ডোরা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য কমান্ডো নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োগ করার আগে যে কোনো কমান্ডোকে ভাল করে যাচাই করে নেওয়া হয়। তারপরই তাদের নিয়োগ করা হয়।
নিরাপত্তা বেষ্টনীর দ্বিতীয় সারিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী। এসপিজির কর্মীদের মতো তারাও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় তারা পটু।
মোদির নিরাপত্তা বেষ্টনীর তৃতীয় সারিতে থাকে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’(এনএসজি)। চার নম্বর সারিতে থাকেন বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তারা। যদি কখনও প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে হামলা চালানো হয়, তা মোকাবিলা করতে সক্ষম ওই গাড়িগুলো। এমনকি এই কনভয় রাসায়নিক ও জৈবিক হামলা প্রতিরোধেও পারদর্শী।
ভারতের গণমাধ্যম বলছে, বুলেট প্রুফ বিএমডব্লিউ-৭ গাড়িতে চড়েন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির মতো দেখতে আরও দু’টি গাড়ি থাকে কনভয়ে। আদতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি কোনটি, সেটি যাতে আততায়ীরা বুঝতে না পারেন সেই কারণেই এই কৌশল।এছাড়া এই কনভয়ে থাকে জ্যামার লাগানো বিশেষ গাড়ি। যার মধ্যে দু’টি অ্যান্টেনা থাকে। রাস্তার ১০০ মিটারের মধ্যে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে পারে এই গাড়ি।
কনভয়ে আরও রাখা হয় একটি অ্যাম্বুল্যান্স। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসার সুবিধার জন্যই অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যখন জনসমক্ষে আসেন তখনও তার পাশে থাকেন সাদা পোশাকে পরিহিত অসংখ্য এনএসজি কমান্ডো।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন থাকলেও, এই পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যায়ের কারণে প্রায় বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন মোদি।
নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম চার বছরের শাসনকালে মাত্রা ৩১টি এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের জন্য প্রায় ৩৮৮ কোটি রুপি খরচ করেছেন। পরের বছরগুলোতে এ খরচ আরও বেড়েছে।
খবর: আনন্দবাজার
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: