মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন।এই বিক্ষোভ বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। শনিবার দেশটিতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হচ্ছে। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতেই এবার নির্বিচারে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই সঙ্গে কঠোরভাবে তা দমন করতে শুরু করে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ইয়াঙ্গুনে গুলিতে ৭ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মান্দালয়ে গুলিতে প্রাণ গেছে ১৩ জনের।
জান্তাবিরোধী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন সিআরপিএইচের মুখপাত্র ড. সাসা বলেছেন, আজকের দিনটি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি লজ্জার দিন। বিক্ষোভের সময় তিন শর বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যার পর তারা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপন করছে।
ইয়াঙ্গুনের দালা নামক উপশহরে স্থানীয় থানার কাছে আজ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, ইনসেইন শহরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। সেখানে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন দেশটির অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সাগাইং অঞ্চল, লাশিও শহর, বাগো এলাকাতেও বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর শোনা গেছে। তবে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিহত মানুষের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দেশের জনগণকে রক্ষা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী।
গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বিক্ষোভকারীদের বলা হয়েছে, ‘আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শেখা উচিত যে আপনারা মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন।’ অবশ্য এই সতর্কবার্তায় এটি উল্লেখ করা হয়নি যে বিক্ষোভ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গুলি করে হত্যার নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না। তবে সেই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই আজ রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত বিক্ষোভকারীর সংখ্যা তিন শ ছাড়িয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গুলিতে এবং তাঁদের এক-চতুর্থাংশের মাথায় গুলি করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে শহর-নগরগুলোয় সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: