এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে কর্মরত তিনজন (মাস্টার এবং ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক এটি চালনার অনুমোদনও ছিল না বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ওগণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে গত এক মাস আগে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, নামমাত্র সাধারণ প্রতিষ্ঠান থেকে অনভিজ্ঞ মিস্ত্রি/ফিটার দ্বারা ইঞ্জিনটি পরিবর্তন করা হয়েছিল।
এছাড়াও লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কারিগরী পরিদর্শন, অনুমমোদন নেওয়া হয়নি। হয়নি কোন ট্রায়াল রানও।
এর আগে, গত ২৪ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে সময় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমডি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে লঞ্চটির ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ায়। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হামজালাল শেখ (৫৩) নামে লঞ্চের এক মালিককে গ্রেফতার করে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৮ ও ১০ এর সদস্যরা।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার লঞ্চমালিক হামজালাল শেখ জানায়, গত নভেম্বরে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। একজন সাধারণ মিস্ত্রি/ফিটার দ্বারা ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ইঞ্জিনটি চীনের তৈরি ছিল। বর্তমানে জাপানি রিকন্ডিশন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছিল না। এছাড়া তার লঞ্চে কর্মরত তিনজন (মাস্টার এবং ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক চালনার অনুমোদন নেই।
দুর্ঘটনার সময় লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও লাইভ সেভিং সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত ছিল না। লঞ্চে অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি, আগুন শনাক্তের যন্ত্র ও সতর্কীকরণ পদ্ধতিতে দুর্বলতা ছিল।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় ক্রটির কারণে ইঞ্জিনে বিকট শব্দ হচ্ছিল। চিমনি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ধোয়া বের হচ্ছিল না, সঙ্গে ছিল অস্বাভাবিক গতি। এক পর্যায়ে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দে ধোয়ার কুণ্ডলী বের হয়। তখন গোটা লঞ্চের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইঞ্জিন রুম থেকেই লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আগুন দেখে দ্রুত নিকটবর্তী তীরে ভিড়িয়ে যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টা না করেই কর্মচারীরা সবাই পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ২৪ ডিসেম্বর দুর্ঘটনার পরই র্যাব খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে র্যাবের হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে পৌঁছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। ঘটনার দিন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অতঃপর র্যাব মহাপরিচালক বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে যান। নির্মম ওই অগ্নিদুর্ঘটনায় র্যাব তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, তদন্ত সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে। লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও লাইভ সেভিং সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত ছিল না। লঞ্চে অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি, আগুন শনাক্তের যন্ত্র ও সতর্কীকরণ পদ্ধতি দুর্বল ছিল বলে জানা যায়। লঞ্চের ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নির্ধারণ যন্ত্রও সঠিক ছিল না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: