দীর্ঘ ১৯ মাস বন্ধের পর খুলে দেয়া হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। তাদের সুবিধার্থে ক্যাফেতে তিন বেলা খাবার পরিবেশন করা হলেও খাবারের মান ও দাম নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। উচ্চমূল্যে নিম্নমানের এসব খাবার খেয়ে যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, তেমনি রয়েছে তাদের স্বাস্থ্যঝুকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, ডেইরি গেট, টারজান সহ কয়েকটি জায়গায় খাবারের দোকান থাকলেও ক্যাফেটেরিয়াই শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা। সেই ভরসাস্থলের এমন দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের দোকানগুলোর তুলনায় ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মূল্য তুলনামূলক কম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ঠিক উল্টো।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের ফলে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা থাকলে তারাই বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন। একদিকে মানহীন খাবার অন্যদিকে খাবারের দাম বেশি।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, “কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যমূল্য অনেক বেশি রাখা হয়। সকাল ও বিকালের নাস্তার দাম ঠিক থাকলেও দুপুর ও রাতের খাবারের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, তাদের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক হয়। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বটতলার দোকানগুলোর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার। ক্যাফের খাবারের ম্যানুতে দেখা যায়, পোলাও মুরগি, খিচুরি মুরগি, মুরগির তেহারী বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা বটতলার দোকানগুলোতে বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। লোকাল দোকান থেকে নিয়ে আসা মিষ্টি বিক্রি হয় ১৫ টাকায়।
ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গিয়াসউদ্দিন মুন্না বলেন, “অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে প্রশাসন থেকে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৫০ বছর হলেও এই সুবিধা দেয়া হয়নি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত মূল্য নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি”।
অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, “উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। সঙ্গে আছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ফলে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন”।
খাবারের দাম ও মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার হিসাবরক্ষক শাহ আলম বলেন, “আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি খাবারের মান ঠিক রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবেশন করতে। আর খাবারের দাম প্রশাসন থেকে যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আমরা সেটাই রাখছি”।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আলমগীর কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে খাবারের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয় না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির জন্য খাবারের দাম এখন বেশি”।
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত খাবারের মান পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু দাম ও মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করে দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনব”।
ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, “ক্যাফেটেরিয়ার ২৫ জন কর্মচারীর বেতন, তিনবেলা খাবার ও রান্নার আনুসাঙ্গিক খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দেয়া হয়”।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: