কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে ১২ তম ব্যাচের চার শিক্ষার্থী কর্তৃক ১৩ তম ব্যাচের এক ছাত্রকে চেয়ারের সাথে বেঁধে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এরই জেরে রাতে দুই ব্যাচের মধ্যে মারামারি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থতি ঠান্ডা করার নামে বিবাদমান পক্ষকে বিচারের নামে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে (৩০১) নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত পাঁচ কর্মী চোট পান বলে জানা গেছে, তবে কেউ গুরুতর আহত হননি।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১১ টার দিকে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষে তুমুল হট্টগোল বাঁধে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিবাদমান দুই পক্ষের কর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াজুল ইসলাম বাঁধন ১২ তম ব্যাচের সোহাগ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে 'তুমি' বলে সম্বোধন করে। যার ফলে ১২ তম ব্যাচের সোহাগ, শাফী, ওয়াকিল, আবিরসহ কয়েকজন বাঁধনকে হলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে শাসায় ও মারধর করে। মারধরের শিকার বাঁধন জানায়, সোহাগ ভাই এর নাম বলায় শাফী ভাই, সোহাগ ভাই, আবির ভাই, ওয়াকিল ভাইসহ কয়েকজন আমাকে নিয়ে চেয়ারের সাথে গামছা দিয়ে বাঁধে। পরনে থাকা বেল্ট দিয়ে আমাকে অনেক মারে। আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর বন্ধুরা আমাকে গাড়িতে তুলে দিলে আমি হল থেকে বাড়ি চলে আসি।’
তবে এই মারধরের কথা অস্বীকার করে ১২ তম ব্যাচের ওয়াকিল আহমেদ জানান, ‘তাকে রুমে নিয়ে মারধরের প্রশ্নই আসে না। সিনিয়রের নামধরে ডাকায় হলের বারান্দায় তাকে শাসানো হয়েছিল।’ এ অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে আবির ও সোহাগকে ফোন করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বাঁধনকে শাসানোর জেরে বৃহস্পতিবার রাতে ১১ টার দিকে ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাফীকে ২০০৪ নং কক্ষে দরজা আটকে মারধর করে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। শাফীকে মারধরের খবর পেয়ে তার বন্ধুরা রুমের দরজা ভেঙে শাফীকে উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে শাফী বলেন, ‘তারা সিনিয়রদের গায়ে হাত তুলেছে, সাংগঠনিক একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। দত্ত হলের ইতিহাসে যা কোনোদিন হয়নি, তারা তা করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তারা হলে থাকার যোগ্য না। আমি তাদের বুঝাতে গিয়েছিলাম তারা আমাকে মারধর করেছে। ইলিয়াস ভাই, মাজেদ ভাই (শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) সাংগঠনিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তা মেনে নিব।
অন্যদিকে ১৩ তম ব্যাচের অন্তত চারজন কর্মী বলেন, আমরা কাউকে মারধর করিনি। শুধু বন্ধুকে মারধরের কারণ জানতে ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। কথা কাটাকাটি থেকে পরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
এই ঘটনায় দুই ব্যাচ মারমুখী হয়ে উঠলে শাখা ও দত্ত হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে সংঘর্ষে লিপ্ত দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের কক্ষে নিয়ে গিয়ে সেখানেও মারধর করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন কর্মী চোট পায়।
এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আলম দীপ্ত বলেন, ‘আমি জেনেছি কথা-কাটাকাটির জেরে দুই ব্যাচের মাঝে উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়। পরবর্তীতে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংগঠনিকভাবে তাদেরকে মিটমাট করে দিয়েছি।’
দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির এমন ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘এ ঘটনাটি ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ম্যাচিউরিটির অভাবে। ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে বেয়াদবি করবে সেটা অপ্রত্যাশিত।’
তার কক্ষে নিয়ে বিচারের নামে মারধরের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সংগঠন অনেক বড়। আমরা একটি পরিবারের মতো। এখানে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে আমরা তা সমাধান করি। আজকেও আমরা সমাধান করেছি। অপরাধের মাত্রা বুঝে সামনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জুলহাস মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি হলে আসলে এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: