আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত দেশের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নানামুখী সংকট-সমস্যা। রয়েছে সম্ভাবনাও। তারমধ্যে অন্যতম হলো 'গণরুম সমস্যা'। একাধিকবার গণরুম বিলুপ্ত করার কথা বলা হলেও বিলুপ্ত হয়নি এই গণরুম। তাই শিক্ষার্থীরা বলছে কাজে নয়, কথায় বড় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে হলে ওঠছেন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের গণরুমের শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসন বলছে তারা কাউকে হলে ওঠতে বাধ্য করেননি। তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি ও সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলে হলে গণরুম না রাখার সিদ্ধান্ত হলেও তার কোন দৃশ্যমান উন্নতি মিলে নি।
সরেজমিনে আবাসিক হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, কবি জসিমউদদীন হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও অমর একুশে হলে বহাল রয়েছে গণরুম। আগের গণরুমগুলোতে চারটি করে খাট বসানো হলেও গণরুম থাকা শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক রুমে আট থেকে নয়টি করে খাট বসিয়েছে। অনেক হলে দেখা যায় মেঝেতে বসানো হয়েছে কাঁথা, বেড ও বালিশ। স্যার এ এফ রহমান হল ও বিজয় একাত্তর হলে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা ওঠতে পারে নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই রাতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। দুই হলের প্রাধ্যক্ষের সাথে কথা হলে জানায়, আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মুখে ফেলে দিতে চাই না। আমরা তাদের কল্যাণ চাই। তাই বর্তমান এ করোনা মহামারী অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে তাদের ওঠার ব্যাপারে নিষেধ করছি। তারা যদি আমাদের কথা না শুনে তাহলে কিছু করার থাকবে না।
গণরুমে অবস্থান করা একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তারা হলে না থাকলে ঢাকায় থাকার জায়গা নেই।
তারা বলেন, আমরা গ্রাম থেকে এসেছি। ঢাকায় হলের বাহিরে থাকার মতো সামর্থ্য নেই। কয়েকদিন পরে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। তাহলে আমরা কী করব? মেস ভাড়া নিয়ে ঢাকায় থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায়ও আনতে পারি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেছে। প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে না দেখে নিজেকেও খুব অসহায় মনে হয়।
গত (১০ অক্টোবর) গণরুম থাকা না থাকার বিষয়ে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে হল প্রশাসনের বৈঠকে ছাত্রলীগকে 'সমঝোতায়' আনতে পারে নি প্রশাসন। প্রশাসন গণরুম না রাখার কথা বললেও ছাত্রলীগ প্রোগ্রামের কর্মীবৃদ্ধির অংশ হিসেবে গণরুমের পক্ষেই অবস্থান নেয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে গতকাল (১০ অক্টোবর) সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে খুলে দেওয়া হলে পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও রোকেয়া হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে উপাচার্য বলেন, গণরুমের বিষয়ে হল প্রশাসন একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোনোভাবেই যাতে আগের মতো ঠাসাঠাসি করে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ না করে। এটি স্বাস্থ্যবিধি পরিপন্থী। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
উপাচার্য আরো বলেন, কথিত গণরুম কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ সংকট নিরসনে হল প্রশাসনের যে বিশেষ উদ্যোগ, সে উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব মহলের সহযোগিতা খুবই জরুরি। এ উদ্যোগটি তখনই সফল হবে, যখন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টকহোল্ডারদের ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। তাহলে দীর্ঘদিনের এই সংকট থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব।
এছাড়া পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলে হলে বাঙ্কবেড বসানোর কথা বলা হলেও এখনো পর্যন্ত বসাতে পারে নি হল প্রশাসন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ড. আব্দুল বাছির বলেন, আমরা গণরুম না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এটা আমরা স্বীকার করি।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তী প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে আমরা উপাচার্যকে গণরুমের বিষয়ে রিভিউ দিবো। উনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো। আমরা যাদের এখনো রুম বরাদ্দ দিতে পারি নি তাদেরকে হলে ওঠার বিষয়ে উৎসাহিত করি নি। কারণ গণরুমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। বরং বলেছি তোমাদের যদি সুযোগ হয় তাহলে বাসা-বাড়িতে থাকো। আমরা পরবর্তী সময়ে বরাদ্দের তালিকা দিবো। তালিকা অনুযায়ী তারা স্ব-স্ব রুমে উঠতে পারবে। প্রশাসনের কথা না মেনে কারো দয়ায় যদি ওঠে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।"
গণরুম প্রশাসন নয় বরং ছাত্রসংগঠনের কর্মী বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোই সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন আব্দুল বাছির।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: