কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামকে পদোন্নতি দিয়ে তা স্থগিতের ঘটনায় গণমাধ্যমে উপাচার্য-ট্রেজারারসহ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে অসম্পূর্ণ ও অর্ধসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কুবি প্রশাসন। তবে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেওয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা বলছেন, তাদেরকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত বক্তব্য অসম্পূর্ণ ও অর্ধসত্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বিবৃতির ব্যাপারে তারা অবগত নন।
সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ তম সিন্ডিকেটে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের সহকারী অধ্যাপক পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য বক্তব্য দিয়ে বলেন শিক্ষক কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিল বা পদাবনতি নিয়ে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ওই সিন্ডিকেটে হয়নি।
এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারারসহ কয়েকজন বিজ্ঞ সিন্ডিকেট সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি অসম্পূর্ণ ও অর্ধসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদোন্নতির আবেদনটি ত্রুটি যুক্ত থাকায় তা স্থগিত রেখে পুণরায় বিভাগে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তির দাবির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে কুবির সিন্ডিকেট সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষকের পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেটে উপস্থাপনে বিভ্রান্তি ছিলো। তথ্যের ঘাটতি ছিলো। তার বিষয়টি সঠিকভাবে সিন্ডিকেটে উপস্থাপিত হয়নি। উনি যদি যথাযথ সার্টিফিকেট এনে রেজিস্ট্রারকে দেন, তাহলে আগামী সিন্ডিকেটে সেটা অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হবে। তাকে এখন যে আবার প্রভাষক করে দেওয়া হয়েছে, এই কথাগুলো আমার জানা ছিলো না। প্রশাসনের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
একই বিষয়ে আরেক সিন্ডিকেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি গণমাধ্যম থেকে কাজী আনিছের পদোন্নতি নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনার বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা সিন্ডিকেটে যা করেছি তাই বলেছি। আমরা বলেছি এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে সেটা প্ল্যানিং কমিটিকে পাঠিয়ে ঠিক করে নিয়ে আসা হোক। এর বেশি একটা কথাও বলেনি, কাজও করেনি। কিন্তু এখন যদি বলা হয় এটা অসম্পূর্ণ, তাহলে আমি জানি না এটা কোন প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু আমি যেটা বলেছি, আমার বাকী সিন্ডিকেট সদস্যরাও একই কথা বলেছে। সেখানে কোনো অসঙ্গতি নেই।
অপরদিকে কুবির সিন্ডিকেট সদস্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, সেখানে কথা না বলাই ভালো।
এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। এই প্রেস রিলিজ যে দিল এটাও আমি জানি না। আমি পরে জেনেছি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে একাধিক বার বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: