ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ডিইউএএ) ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছে।
৮ অক্টোবর, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) তে অনুষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান উদ্বোধন করবেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর উপাচার্য মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। পরে ইভান শাহরিয়ারের কোরিয়োগ্রাফিতে ‘নৃত্যভূমি’ একটি নৃত্য পরিবেশন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে টিএসসি অডিটোরিয়ামে মূল আলোচনা সভা শুরু হয়।
এসময় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর এলাহী ও এ কে আজাদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা ইউনিভার্সিটির অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ড. মোহাম্মদ ফারাসউদ্দীন, সিনিয়র সহ-সভাপতি সায়েখ সিরাজ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মহসচিব মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক স্মৃতিচারণ করে বলেন বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত। আমাদের জীবনের শ্রেষ্ট সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় না হলে ভাষা আন্দোলন হতো না। সেসময়ে যারা বাংলা ভাষাকে অস্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ মাতৃভাষা রক্ষার সেই আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় না হলে ঊনসত্তরের গনঅভ্যুত্থান হত না। আর এরই প্রেক্ষিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হতো যাদের নেতৃত্ব আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সাহেবের পতন হয়েছিলো এবং এরই ধারাবাহিকতায় সত্তরের নির্বাচনে এতবড় একটি বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। এই আন্দলনের মাধ্যমে জণগনের মেন্ডেড পেয়েছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ডাক দেয়া সহজ হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের প্রায় সকলই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ছাত্র ছিলেন।"
এসময় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক গৃহীত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, "এসোসিয়েশন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। আমরা এখানে অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। তাদের যদি একাট পার্ট টাইম কাজের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সমস্যা হবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই পার্টটাইম জবের সুযোগ অছে। এটা আমাদের দেশেও সম্ভব। সবচেগবেষণা না থাকলে ভবিষ্যতে মেধা সংকট দেখা দিবে। এমনিই বর্তমানে প্রযুক্তির কারণে ছেলেমেয়েরা বই বিমুখ হয়ে পরেছে। আমাদের সময় আমরা লাইব্রেরিতে যেতাম, লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ ছিলো কিন্তু বর্তমানে সবকিছু মোবাইলে পাওয়া যায় বলে গভীর রাত ১২ টা, ১টা পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা এসব চালায়। লেখা পড়া রেখে ছেলেমেয়েরা যেভাবে মোবাইল নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকে সেটি জাতির জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জাতি মেধা শূন্য হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই কানেক্টিভিটির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন, কিন্তু সবকিছুরই একটা মাত্রা থাকা প্রয়োজন। প্রযুক্তির মাধ্যমে মিথ্যাচার, অপপ্রচার সহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে। এগুলোর যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে তাহলে এদেশে সুস্থ রাজনীতি ও মানুষের সুস্থ জীবনযাপন খুবই কঠিন হয়ে যাবে।"
তিমি আরও বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগে সারা জাতিকে পথ নির্দেশ করত, জাতির বিবেক হিসেবে ছিল,সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো রকম পদস্খলন দেখি, নিশ্চয়ই সাবেক ছাত্র হিসেবে আমরা ব্যাথিত হই। আমরা আশা করব, বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের গৌরবের পতাকা সমুন্নত রাখবে।"
উদ্বোধনকালে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পূর্বের কমিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। নতুন কমিটিরও এমন অনেক ভাবনা ও প্রত্যয় নিশ্চয়ই আছে। অ্যালামনাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের ভাবনা ও প্রত্যয়গুলো বাস্তবায়িত হবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: