ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি ও শিক্ষার্থীদের অধিকার সচেতন করার লক্ষ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গাকসু) নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রনেতারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের ভিত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময়ই ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির পথ রুদ্ধ করে রাখে বলে অভিযোগ গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি রনি আহম্মেদের। তিনি বলেন, প্রশাসন চায় না নতুন ছাত্রনেতৃত্ব আসুক। ছাত্রনেতৃত্ব আসলে তাদের অনিয়ম করতে খুব অসুবিধে হয়। ডা: জাফুরুল্লাহ চৌধুরীর পীড়াপীড়িতে প্রশাসন রাজি হয় ঠিকই, কিন্তু গঠনতন্ত্র সংশোধন করার নামে তারা বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে যা যোগ্য নেতৃত্ব আসার পথ বন্ধ করে দেয়। তবে প্রশাসনের উচিত নির্বাচনের বিষয়টা ঝুলিয়ে না রেখে, পরিস্কার ভাবে বলে দেওয়া, তারা নির্বাচন দেবে কীনা?
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু শিক্ষকের কারণেই নির্বাচন হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে ছাত্রনেতা সুজন রানা বলেন, 'ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্যারের জন্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখনও টিকে আছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের চাপের মুখে এটা থাকতো না। ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেন না হয় এর জন্য কিছু শিক্ষক ও প্রশাসন ঠাণ্ডা মাথায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, তারা আমাদের থেকে স্মারকলিপি নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন অনেক সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মনে হয় স্মারকলিপির ব্যাপারে তারা জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্যারের সঙ্গে কোন কথায় বলেনি।"
সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কেন গড়িমসি চলছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ( ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, "সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা আমি বলি নাই। জাফরুল্লাহ স্যার বলেছেন। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখনো আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল হয়নি, একাডেমিক কাউন্সিল থেকে গঠনতন্ত্র বা সবকিছু ঠিক করে সিন্ডিকেট মেম্বারদের কাছে পাঠানো হবে। তাদের দেখা হলে পরবর্তীতে এটি ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে পাঠানো হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই আমরা নির্বাচন দিতে পারবো।"
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য যে খসড়া প্রনয়ণ করা হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রাধান্য পায়নি এমন অভিযোগের জবাবে উপাচার্য আরও বলেন, "আমরা সাধারণ সভা করে শিক্ষার্থীদের মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতেই গঠনতন্ত্র পাশ করেছি। মতামত দেওয়ার জন্য সেই সাধারণ সভা উম্মুক্ত ছিল, তাই সেখানে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মতামত প্রাধান্য পেয়েছে। আর মনগড়া সংবিধান হয়েছে এমন কথা কেউ আমাদের কাছে বলে নাই। তোমাদের কাছে বলছে এটাইতো। তবে আমাদের কাছে এমন কোনো কথা আসেনি। এমনকি সম্মিলিতভাবেও কোন কথা আসেনি।"
অন্য সব জায়গায় ১ বছর মেয়াদী ছাত্র সংসদ হলেও এখানে ২ বছর, যদিও শিক্ষার্থীরা পুরো সময় দায়িত্ব পালন করতে পারে না! সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এটা প্রথম থেকে এভাবেই চলে আসছে, তাই এটা নিয়ে আর ভাবি নাই। এভাবেই চলুক। পরবর্তীতে সমস্যা মনে হলে পরিবর্তন আসতে পারে।
এদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রসংসদের দায়িত্ব হস্তান্তর করার দাবি জানিয়ে গাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন,' শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করলে প্রতিনিধিদের হাতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবশ্যই ক্ষমতা দিতে হবে। স্টুডেন্ট পাওয়ার বলে যে কথাটা আছে সেটা দেখতে চাই। যেখানে নির্বাচিতরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি হাসিলের সুযোগ পাবে। তারা প্রশাসনের হাতের পুতুল হবে না।'
গাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা আবু মুহাম্মদ মুকাম্মেল (সহকারী রেজিস্ট্রার) বলেন, 'ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠীত হবে পরবর্তীতে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জানিয়ে দেওয়া হবে।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: