হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) পরিবহন সংকট ও নতুন পরিবহন শিডিউলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় পরিবহন সংকটের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে শহরে থাকা শিক্ষার্থীদের।
অপর দিকে বাইরের বাসে চড়তে গিয়ে প্রতিনিয়ত নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকল হয়ে পড়ে থাকা পরিবহনগুলো সংস্কারে তেমন তৎপরতা নেই প্রশাসনের। এমনকি বাস না থাকায় এবং ট্রিপের সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেশি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও মেলেনি কোনো সমাধান। আমরা বাস ও প্রতিদিনের ট্রিপ বাড়ানোর জন্য আবেদন করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো কমিয়ে দেয়। এ দিকে অনেক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডে নষ্ট হয়ে পরে আছে পাঁচটি বাস।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পূর্বে সারাদিনে মোট ৪৬টি ট্রিপ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শহর এবং শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতো। বর্তমানে সেই ট্রিপ সংখ্যা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২টি ট্রিপ দিয়ে নতুন পরিবহন সময়সূচি প্রকাশ করেছে প্রশাসন, যা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। রাত ৮টার পরে শহর থেকে কোন বাস নেই, রাতে কলেজ মোড় থেকে ক্যাম্পাস রোডে প্রতিনিয়ত ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রশাসন ছিনতাইকারীদের পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
নতুন বাস শিডিউল ও পরিবহন সংকট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। বর্তমান প্রশাসনের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই শিক্ষার্থী বান্ধব নয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, বর্তমানে হাবিপ্রবির পরিবহন পুলে রয়েছে প্রায় ২০টি বাস, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চার পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ও স্টাফদের শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের কাজে ব্যবহৃত হয়। অর্থাভাবে ও মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বিকল অবস্থায় প্রায় এক বছর থেকে পড়ে আছে ১১ ও ১২ নাম্বার বাস। এছাড়াও তিন থেকে ছয় মাস ধরে পরে আছে ৬, ১৪ ও ১৬ নাম্বার বাস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন কর্মচারী বলেন, বর্তমানে ২০টা বাসের বিপরীতে ড্রাইভার মাত্র আটজন। অনেক ড্রাইভারকে দুইটা করে বাস চালানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পরিবহনের সমস্যার বিষয়ে পরিবহন প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও ওনারা কোনো সুরাহা করেননি। বাস সংস্কারের ফাইল বিভিন্ন কমিটি উপকমিটি ঘুরে পাশ হতেই লেগে যাচ্ছে কয়েকমাস।দীর্ঘদিন ড্রাইভার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে আর্থিক সমস্যা, সরকারি নির্দেশনাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
এসব বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুর সাড়ে বারোটায় ছয় দফা দাবি নিয়ে পরিবহন পরিচালকের অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানায়। এসময় পরিবহন পরিচালক অধ্যাপক ড. খালিদ হোসাইন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ, ছাত্র পরামর্শ নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ বিষয়ে ১৭ তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান সারোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই পরিবহন সংকট এবং বাস শিডিউল নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই নি। উল্টো নতুন বাস শিডিউলে ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার দরুণ ভোগান্তি এখন পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় চরমে পৌঁছেছে। এজন্য পূর্বের বাস শিডিউল কার্যকর, সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বাস চালু, আধাঘন্টা পরপর পরিবহন সেবা চালুসহ পরিবহন প্রশাসনকে আমরা ছয় দফা দাবি জানিয়েছি।
১৮ তম ব্যাচের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করে। অনেক শিক্ষার্থী দিনাজপুর শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান শিক্ষার্থীদের শহরে যাতায়াতের জন্য নির্ভরযোগ্য নিরাপদ মাধ্যম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান বাস শিডিউল আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর বাস, মানে কোনোভাবে বাস মিস হলেই পরবর্তী বাসের জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমার নতুন শিডিউলে ক্যাম্পাস থেকে সকাল ১১টার পর বাস দুপুর ১টা, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এআং পরিবহন সংকট ও শিডিউল সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবহন ও যন্ত্র মেরামত শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. খালেদ হোসাইন বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা এবং সিদ্ধান্তে এই সময়সূচি তৈরি করা হয়েছে। শতকরা ২০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সেই মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন এই সময়সূচি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ড্রাইভার সংকট, নতুন অর্গানোগ্রাম না হওয়ায় আমরা দ্রুত নিয়োগ দিতে পারতেছি না। মাস্টার রোল নিয়োগও এখন ইউজিসি থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ও চাহিদা অনুযায়ী তারা চাইলে আমরা সময়সূচির বাইরেও অতিরিক্ত বাস দেওয়ার চেষ্টা করবো।
দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বাস গুলো কেনো ঠিক করা হচ্ছে না বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি নষ্ট বাসের জন্য বরাদ্দ ৭৫ হাজার টাকা। এই অপ্রতুল টাকা দিয়ে বাস গুলো মেরামত করা সম্ভব নয়।যেসব বাস এই টাকার মধ্যেই করা যাবে আমরা সেগুলো মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশের জ্বালানি সংকট কেটে গেলে পরিবহন শিডিউলের এই সমস্যা সমাধান হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: