১৩ই আগস্ট, ২০২২ (শনিবার) ফুটবল ক্রিকেট স্পোরটার্স (এফ.সি.এস.) তাদের প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জমকালো ভাবে আয়োজন করে তাদের সংগঠনের সাফল্যের এক বছর।
এফ.সি.এস. মূলত একটি খেলাধুলা বিষয়ক সংগঠন। যেখানে নানান শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নানান প্রাতিষ্ঠানিক কর্মস্থলের প্রায় ১,০০০ যুবক নিয়মিত খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে। এখানে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবি যারা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এর সাপ্লাই চেইন বিভাগের প্রভাষজ জনাব মোফাচ্ছেল হোসেন এর হাত ধরে এফ.সি.এস. তার যাত্রা শুরু করে এবং তিনি-ই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান & কর্মস্থলের খেলাধুলাপ্রেমী শতাধিক যুবকদের একত্রিত করে এই সংগঠন টি শুরু করেন। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য ব্যাক্তিজীবন, পড়াশোনা এবং কর্মজীবনের নানাবিধ অশান্তি এবং কাজের চাপে যে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়, তা কাটিয়ে উঠা এবং খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি দূর করা এবং শারীরিক ভাবে নিজেদের সুস্থ রাখা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ২ দিন করে (সোমবার এবং বুধবার) সান্ধ্যকালীনভাবে আয়োজিত হয় ফুটবল ম্যাচ।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার এবং শনিবার দিনব্যাপী আয়োজিত হয় ক্রিকেট ম্যাচ যেখানে অংশগ্রহন করে এফ.সি.এস. এর নিজেদের সদস্যরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১ বছরে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৩০ জন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০০ জনে। যারা নিয়মিত একটি সাপ্তাহিক চাঁদার মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের খেলাধুলা সহ যাবতীয় খরচের যোগানদার। নিয়মিতভাবে খেলাধুলার এই আয়োজন এবং উদ্দেশ্যে তারা এতটাই সফল যে, ইতিমধ্যেই তারা নিজেদের সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করেছে একটি ক্রিকেট এবং একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট। এফ.সি.এস. এর এই ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং সাফল্য দেখে অভিভূত হয়ে এবং এফ.সি.এস. এর এই উদ্দেশ্য এবং ক্রমবর্ধমানতা কে আরো সামনে আগানোয় অনুপ্রানিত করতে "Great Wall Ceramic Industries Limited" এক বছরের জন্য এর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এফ.সি.এস. এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যা এফ.সি.এস. এর জন্য আরো একটি গৌরবান্বিত সাফল্য।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার জনাব জাভেদ ওমর বেলিম।
আয়োজনে উপস্তিত হয়ে তিনি বলেন- "ফুটবল আমি ভালোবাসি আর আর ক্রিকেট তো আমার নেশা এবং পেশা। যেখানে ঢাকা শহরে খেলাধুলা করার জন্য তেমন ভালো কোনো মাঠ বা ব্যবস্থা নেই, কিন্তু তারপরেও পড়াশোনা এবং কর্মজীবনের পাশাপাশি যুবকদের এই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ এবং সেটি চালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি আশাজাগানিয়া ব্যাপার। আমি চাইবো এফ.সি.এস. এর এই ধারা অব্যাহত থাকুক এবং এফ.সি.এস. থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, গ্রামে, অজপাড়াগায়ে, মহল্লায় সব জায়গায় এটি বিস্তার লাভ করুক। আজকের এই আয়োজনে এতগুলো স্পর্টসম্যানের মাঝে আমি উপস্থিত হতে পেরে সত্যিই উদ্বেলিত।"
এফ.সি.এস. এর প্রনেতা জনাব মোফাচ্ছেল হোসেন বলেন- "শুরুটা আমার জন্য খুব একটা মুশকিল ছিলো না। যেহেতু আমি একজন শিক্ষক এবং অবশ্যই আমি খেলাধুলা পছন্দ করি, তাই আমি সহজেই জানতাম আমার কোন কোন ছাত্র খেলাধুলা ভালোবাসতো। যাত্রার শুরুটা তাদের নিয়েই। আমার অধিকাংশ ছাত্ররা তাদের স্নাতক শেষ করে এখন নামকরা কর্মস্থলে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ন পদ সামলাচ্ছে কিন্তু তারপরেও খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রহ অভাবনীয়। তাদের কে একত্রিত করে প্রাথমিকভাবে সংগঠনটি শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি আমাদের হতে হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেলার মাঠের যথেষ্ট অভাব। ঢাকা শহরে হাতে গোনা মাত্র ৫-৭ টি মানসম্মত খেলার মাঠ রয়েছে। যেগুলো তে খেলতে গেলে আবার গুনতে হয় বেশ ভালো অংকের টাকা। তাও অনেক সময় পাওয়া যায় না। টাকা দিয়েও যদি মাঠ পাওয়া না যায় তাহলে আমাদের দেশের উঠতি কিশোর তরুনদের জন্য ক্ষেত্রটা কতখানি সংকুচিত সেটি আমাকে ভাবায়। খেলাধুলা যেমন একজন তরুন কে শারিরীক ভাবে সুস্থ রাখে তেমনি তার মানসিক সুসাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। খেলাধুলা তরুন সমাজকে বিরত রাখে অসামাজিক এবং অসংলগ্ন কাজ থেকে। ব্যাক্তিক এবং কর্মজীবনে সাফল্য পেতে সুস্থ শরীর এবং মন খুবই উপযোগী। বর্তমান মোবাইল এবং ইন্টারনেট নির্ভর সমাজে খেলাধুলা কেমন যেনো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্ভর হয়ে গেছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। তাছাড়া আমাদের এখানের সদস্যরা কেউ শিক্ষার্থী কেউ চাকুরিজীবী অথবা ব্যবসায়ী। এখান থেকে নেটওয়ার্কিং এর অনেক বড় একটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থী ছোটভাই তার কর্মক্ষেত্রের বড়ভাই থেকে জানতে পারছে পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে আর কর্মজীবি বড়ভাই তার শিক্ষার্থী ছোটভাই থেকে জানতে পারছে তাদের মন-মানসিকতা এবং পড়াশোনার ধরন কত দ্রুত পাল্টাচ্ছে এবং আধুনিকায়ন হচ্ছে। জেনারেশন টু জেনারেশন যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়, সেটা কাটানোর এটি একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে বলে আমি মনে করি। আমাদের যাত্রা আরো দ্বীর্ঘায়িত করতে আমরা "Great Wall Ceramic Industries Limited" কে আমাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পেয়েছি, আজকের দিনে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। সামনে আমাদের ইচ্ছা আছে আমরা শুধু ঢাকা শহরেই নয় ছড়িয়ে যাবো বাংলাদেশের প্রতিটা বিভাগ এবং প্রতিটা জেলায়, যেখান থেকে সদস্যরা আমাদের এই সংগঠনের আয়োতাভুক্ত হবে।"
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলার জনাব জাহিদ হাসান এমেলি এবং গ্রেটওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর বেশ কিছু কর্মকর্তাবৃন্দ।
আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়, ঢাকার ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের "রেডক্লিফ বুফেট রেস্টুরেন্ট এ"।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: