জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানিয়ে ধৃষ্টতা দেখানোর অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: রহমতুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ১৮ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৩টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে কুশপুত্তলিকাদাহ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার।
আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম, ঢাবি শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে অধ্যাপক ড. মোঃ রহমতুল্লাহর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী ও বেঈমান খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানিয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখানোর অপরাধে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: রহমতুল্লাহকে আগামী ২৪ ঘন্টা মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এটা নতুন নয়, এর আগেও আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকাণ্ডে তিনি সবসময় বাধা প্রদান করেছেন। হলের প্রভোস্ট থাকা অবস্থায় এই শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে বিরূপ আচরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনী মোশতাকের পক্ষ নেয়ার অপরাধে ঢাবিতে এই শিক্ষকের কোন জায়গা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিলে, তাকে ঢাবি থেকে বের করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সুস্পষ্ট ভাবে দাবি জানাচ্ছি, অধ্যাপক রহমতুল্লাহর বহিষ্কার নিয়ে ঢাবি প্রশাসনের কোন ধরনের তালবাহানা কখনোই মেনে নিবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওসহ অধ্যাপক রহমতুল্লাহকে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ রহমাতুল্লাহ কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কূখ্যাত খুনী মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মত ধৃষ্টতা দেখানোর অপরাধে অবিলম্বে এই পাকি কীট শিক্ষক নামক কলঙ্ক রহমতুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বহিষ্কার করতে হবে। আমরা মাঝে মাঝে এমন ধৃষ্টতা দেখি কখনো মোর্শেদ খান,কখন রেজাউর রহমান নানাভাবে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।আগামীতে যেন এমন ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেই দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি রাখতে হবে।"
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম বলেন, "অধ্যাপক ড. রহমতুল্লাহ আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছেন। জাতির পিতার খুনী মোশতাকের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে তিনি ঢাবিতে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা অবিলম্বে তার বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপোষহীন থাকবে ঢাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সেই জাতির পিতার খুনী মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ধৃষ্টতা দেখিয়ে ঢাবির এই শিক্ষক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে চরমভাবে অবমাননা করেছেন। এই শিক্ষক কেন এখনো বাহিরে, এতোক্ষণে তার স্থান কারাগারে হওয়া উচিত। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহবান, অবিলম্বে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজপথে নেমে এই শিক্ষককে সমুচিত জবাব দিবে। খুনী মোশতাকের দালাল কখনোই ঢাবির শিক্ষক হতে পারে না।"
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, "বঙ্গবন্ধুর খুনীর পক্ষে কথা বলার অপরাধে এই শিক্ষক নামের কলঙ্ককে তার সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করলে কোন রাজাকারের বাচ্চাকে আমরা এক বিন্দু ছাড় দিবো না।"
ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, "স্বাধীনতার ৫০ বছর ও ঢাবির ১০০ বছর উদযাপনকালীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নিকট এধরনের ঘৃণিত বক্তব্য কখনোই মেনে নেয়া যাবে না। অবিলম্বে অধ্যাপক ড. রহমতুল্লাহকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। যাতে ঢাবিতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। কারণ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা মানেই মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা। আশা করি ঢাবি প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং দ্রুত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যথায় আমরা শিল্পীসমাজ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাথে রাস্তায় নেমে কঠোর আন্দোলন করবো।"
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার বলেন, "অধ্যাপক রহমতুল্লাহর বক্তব্য আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কখনোই মেনে নিবো না। আর নয় প্রতিবাদ, এবার হবে প্রতিরোধ। অবিলম্বে তাকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: