রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শের-ই-বাংলা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন অই হলের ছাত্রলীগ নেতা। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে সিট ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়ার পর আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রুম থেকে ওই ছাত্রের জিনিসপত্র বের করে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে রাতুল। তিনি শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদে আছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আকিব জাভেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শের-ই-বাংলা হলের ১২৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ নেতা রাতুল ওই কক্ষে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কমল কুমার পাল নামের আরেক শিক্ষার্থীকে তুলে দিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীর আবাসিকতা নেই। কমল কুমার পাল বলেন, আমাকে রাতুল ভাই এই সীটে তুলে দিয়েছেন।
ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী আকিব জাভেদ বলেন, ‘আমি গত মার্চ মাসের ১ তারিখে এই রুমে উঠেছিলাম। তখন আমি ফ্লোরিং করে থাকতাম। গত ৮ এপ্রিল ২০১৫-১৬ সেশনের রুমমেট ভাই চলে যাবার পর আমি এ সিটে উঠি। গতকাল রাত ১২টার দিকে হলের ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর আমার কক্ষে আসেন এবং বলেন, “তোমাকে কে তুলেছে এই বেডে। তোমার সাহস তো কম নয়, তুমি এই বেডে উঠেছ! এই হলে তোমাকে যেন আর না দেখি। কাল সকাল ৯টার মধ্যে এখান থেকে বের হয়ে যাবি।” এই বলে চলে যান। এরপর আজ সকাল ৯ টার দিকে ওই অনাবাসিক শিক্ষার্থী কমল কুমার পাল, ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর সহ সাত থেকে আটজন ১২৯ নম্বর কক্ষে আসেন। পরে তাঁরা আমার বইপত্র, বিছানা সহ সব জিনিস বাইরে ফেলে দেন’।
হল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারির প্রথম দিকে আবাসিকতার জন্য আবেদন জমা নেয় হল প্রশাসন। তারপর ফেব্রুয়ারিতে হয় মৌখিক পরীক্ষা। হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে মার্চের প্রথমে ১২৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন আকিব। ওই বেডে ২০১৫-১৬ সেশনের এক শিক্ষার্থী আরও এক মাস ছিলেন। পরে তিনি ৮ এপ্রিল চলে যান। পরে এই বেডে ওঠেন আকিব।
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাতুল বলেন, ওই ছেলেটির হলে আবাসিকতা থাকতে পারে। তবে তার ঐ রুমের কোন কার্ড বা আবাসিকতা নাই। আমার এক ব্যাচমেইট বন্ধু ঐ রুমটায় থাকতো, তার চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আমি আমার এক ছোট ভাইকে তুলতে চেয়েছিলাম। আমার ব্যাচমেইট বন্ধু হঠাৎ চলে যাওয়ায় গত পরশুদিন আকিব নামে ছেলেটি ঐ সীটে ওঠে যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আকিব জাভেদের বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. মোক্তার আলী। পাঁচ মাস আগে তিনি মারা যান। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। অন্য ভাইরা কৃষিকাজ করেন। তাঁদের আলাদা সংসার। ছোট ভাই একটি মাদ্রাসায় পড়ে। লেখাপড়া চলে আত্মীয়স্বজনদের টাকা দিয়ে।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. হবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজ সকালে তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে সবকিছু শুনেছেন। আকিব ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: