জাতিসংঘের স্ক্যাপের আয়োজনে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে চলছে " গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং " ট্রেনিং কার্যক্রম। যেখানে ১০ টি দেশের মোট ৭০ জন তরুণ নারী উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবির) অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত আনজুম।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের ( স্ক্যাপ) এবারের ট্রেনিং কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের ১২ জন নারী উদ্যোক্তা।
স্ক্যাপের নিজ অর্থায়নে পাঁচ দিনের এই ট্রেনিং কার্যক্রমে অংশ নেয়া প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তা পাবেন ৯০০ ডলার করে।
উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথমদিকের ঘটনা জানতে চাইলে নিশাত বলেন "
আমি উদ্যোক্তা হবো এমন কোনো ভাবনাই ছিলো না । তবে ছোটোবেলা থেকেই আকাআঁকি নিয়ে অনেক শখ ছিলো। চারুকলা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আকাআঁকি ছাড়িনি, টুকটাক শখের বসে করতাম। ডিজাইন করতেও ভালো লাগতো, নিজের জামা নিজে ডিজাইন করে পরতে পছন্দ করতাম।মাটি, কাঠ, পুঁথি আর রং দিয়ে নিজের জন্য গহনা তৈরি করতাম, বন্ধুদের আমার হাতে বানানো ক্রাফট আইটেম গিফট করতাম। অতপর ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের পর আমার বানানো জিনিস গুলো অনেকেই পছন্দ হতে লাগলো। আর আমার কাছে বানিয়ে নিতে চাইতো। এখান থেকেই মাথায় আসে আমার রংতুলির এই শখ টাকে একটি উদ্যোগে রূপ দেয়ার। উদ্যোগ হিসেবে শুরু করেছিলাম কাঠের বেসের উপর পেইন্টিং করা গহনা দিয়ে। তারপর একে একে মেটালের গহনা, পাটের গহনা, কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্ট ( যেমন : কূর্তি, ব্যাগ, পাঞ্জাবি, বেবি ড্রেস, কুশন কভার) করেছি। এছাড়াও মাটির উপর হ্যান্ডপেইন্টেড হোম ডেকর আইটেম এবং সর্বশেষ সংযুক্ত পরিবেশ বান্ধব পাট পণ্য নিয়ে আমি আমার নতুন ইনোভেশন শুরু করি "।
প্রথমবার দেশের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে নিশাত জানান, " অনেক ভালো লাগছে। কারণ প্রতিনিয়ত আমি আমার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। উদ্যোগের শুরু থেকেই শুধু মাত্র পণ্য বিক্রি করা আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি সব সময় চেয়েছি আমার কাজ গুলো যাতে সারাদেশে এমনকি বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পরে। কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রচুর নেটওয়ার্কিই প্রয়োজন ছিলো। তাই আমি কাজের চেয়েও নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলাম। বর্তমানে জাতিসংঘের স্ক্যাপ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তারা আমাকে এবং আমার পণ্যকে গ্লোবাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে বিশ্বের ১০ টি দেশের নাগরিকের সামনে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে, আমি সত্যিই দারুণ উচ্ছ্বসিত "।
বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে কেমন লাগছে এ ব্যাপারে নিশাত বলেন, " দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারার মতো দারুণ বিষয় আর কি হতে পারে কি? বাইরের দেশের মানুষ সত্যিই বাংলাদেশকে অনেক পছন্দ করে। এখানে না এলে হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারতাম না। আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমরা এমন একটি জায়গায় আমাদের দেশের পণ্য, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্য গুলোকে সকলের মাঝে তুলে ধরেছি এটা নিঃসন্দেহে দারুণ আনন্দের ব্যাপার। আমি ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর দারুণ কিছু সেশনে অংশ গ্রহন করেছি। উপস্থিত ১০ টি দেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সাথে নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করেছি, কিভাবে আমি আমার পণ্য গুলোকে তাদের দেশে পাঠাতে পারবো কিংবা কিভাবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে দিতে পারবো এসব নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। এছাড়াও অন্য দেশের উদ্যোক্তাদের থেকে তাদের দেশীও পন্য কিনেছি এবং তারাও আমার পণ্য নিয়েছে। সর্বপরি একটা দারুণ সময় উপভোগ করছি।
এদিকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত জানান, "
ভবিষ্যতে স্টার্টআপ নিয়ে ভাবছি। ইচ্ছা আছে পাটপণ্য নিয়ে ইনোভেটিভ কিছু করার। যেহেতু পাট আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য এবং এটি পরিবেশ বান্ধব। তাই জুট কটন, জুট ফেব্রিক নিয়ে ভবিষ্যতে উদ্যোগ পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে "।
নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে নিশাত আনজুম বলেন, "
উদ্যোক্তাদের জন্য এটাই পরামর্শ থাকবে, যারা সত্যিই উদ্যোক্তা হতে চায়, তারা যেনো নিজের উদ্যোগকে ভালোবাসে এবং শুধু মাত্র পণ্য বিক্রির চিন্তা না করে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। পাশাপাশি নিজের উদ্যোগকে নিয়ে একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা প্রনয়ন করে । মনে রাখতে হবে, নিজের স্বপ্ন যত বড় হবে ,তার পথও ততো কঠিন হবে। তাই সময় দিতে হবে এবং ধৈর্য্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে "।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: