মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলী ১০২ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা আহ্বান করেছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সভা শুরুর পরই বোর্ড সদস্যরা নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্য সভা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এদিকে উপাচার্যর এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন আপগ্রেডেশনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা। সভা স্থগিতের কথা জানাজানি হলে বেলা ১২টার দিকে তাঁরা উপাচার্যকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রিজেন্ট বোর্ডের সভা স্থগিত হওয়ার পর প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য। পরে বিকেলে রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকুর সমঝোতায় তিনি মুক্ত হয়েছেন।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভার দিন ধার্য করে তিনি পুলিশ প্রহরায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ হওয়ায় ক্যাম্পাসে একটু ঝামেলা দেখা দেয়। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে সাংসদ শামসুল হকের উপস্থিতিতে বিষয়টি সুরাহা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তারা ফিরে গেলে উপাচার্য ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছেন।
রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা শুরু হয়। শুরুতেই বোর্ডের সদস্যরা নিয়োগে আপত্তি তোলেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের ভাতিজিকে চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। সদস্যরা নিয়োগ স্থগিত রেখে অন্য অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান। এতে উপাচার্য ক্ষিপ্ত হন। নিয়োগ না হলে রিজেন্ট বোর্ড স্থগিতের ঘোষণা দেন। মাত্র ৩০ মিনিট আলোচনার পরই রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা সভাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ মার্চ উপাচার্যের দায়িত্বকালের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এর আগে তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। রিজেন্ট বোর্ডের এই ৬০তম সভায় ৬১টি আলোচ্য সূচির মধ্যে ৪২টি ছিল নিয়োগের অনুমোদনসংক্রান্ত। এসব নিয়োগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। স্বজনপ্রীতি করে উপাচার্য এম রোস্তম আলী তাঁর ভাতিজি কানিজ ফাতেমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে চাকরি দিয়েছেন। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুমিল্লা সদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। তালিকায় নিজের নাম না দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যের পথরোধ করেন। তিনি চাকরির জন্য উপাচার্যকে ঘুষ দিয়েছেন দাবি করে সেই টাকা ফেরত চান। এ–সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর নিয়োগটি বাতিল হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: