রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাবে বেড়েই চলেছে এমন ঘটনা৷ এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। ফলে ক্যাম্পাসে ছিনতাই এড়াতে 'নিরাপত্তা জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ' বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা৷ এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা থানায় বার বার অভিযোগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তুহিন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি থাকা সত্বেও ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে হরহামেশাই ঢুকছে বহিরাগতরা। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, ফোন ছিনতাই করছেন। প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা কোনো ছিনতাইকারীকে এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন 'ব্যর্থ' দাবি করে প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়েছেন তারা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটের পাশে এক শিক্ষার্থীর ব্যাগ ও ফোন ছিনতাই হয়। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাছনিমা খানম। এক মোটরসাইকেল আরোহী ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তিনি রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে হাতে ও পায়ে গুরুতর জখম হন।
এর আগে, গত সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন গ্ৰাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা বৃষ্টি। এর তিনদিন আগে গত শুক্রবার দিনে-দুপুরে উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে এক ছিনতাইকারী মাইশা জান্নাত নামে এক ছাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এতো সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন আছে, প্রক্টরিয়াল বডি আছে তবুও এসব ঘটনা ঘটছে৷ তাহলে এত নিরাপত্তা, প্রক্টরিয়াল বডি থেকে কী হলো! এ ব্যাপারে প্রক্টরিয়াল বডি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।'
সাদিকুল ইসলাম সাগর আরও বলেন, 'ছিনতাইয়ের ব্যাপারে দণ্ডবিধি ৩৫৬ ধারায় দুই বছরের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ৩৯২ ধারায় মামলা নেয় পুলিশ। সাধারণত ছিনতাইয়ের মামলাগুলো পুলিশ নিতে চায় না, অনীহা দেখায়। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো অনেক বেশি হলে বুঝতে হবে ওই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব খারাপ অবস্থায় আছে। ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম। তাদের তৎপরতার অভাবেই এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।'
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী বলেন, 'আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে ইতিমধ্যে অবহিত করেছি। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।'
এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তুহিন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার কাছে একটাও অভিযোগ আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মোবাইল হারানোর জিডি হয়েছে আমার কাছে।'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: