ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থার জন্য অর্থায়ন বন্ধ করলো ৯ দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২৮ জানুয়ারী ২০২৪, ১২:৪৯

সংগৃহীত ছবি

গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। আর হামাসের এই হামলায় ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছে।

আর এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ৯টি দেশ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থার অর্থায়ন স্থগিত করেছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর অর্থায়ন স্থগিত করেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সংস্থাটি তার বেশ কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর অর্থায়ন স্থগিতের বিষয়টি সামনে এলো।

যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, তারা ইসরায়েলের অভিযোগে ‘শঙ্কিত’। ইউরোপের এই দেশটি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডা, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানিও জাতিসংঘের এই সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থায়ন স্থগিত করেছে।

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ পরিচালনা করা জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে। গাজার অভ্যন্তরে সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।

গত শুক্রবার লিখিত এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর অন্তত ১২ জন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না হলে ইউএনআরডব্লিউএ-এর তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ বন্ধ থাকবে বলেও সেসময় ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। আর এ কারণে ইউএনআরডব্লিউএ গাজাজুড়ে তার অবকাঠামোগুলো লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত বেসামরিক মানুষকে আশ্রয় দিতে ব্যবহার করেছে।

ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, তারা ইসরায়েলের সরবরাহকৃত তথ্যের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

মূলত ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএ-সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব এবং এমনকি ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগও এনেছে।

বিবিসির সাথে কথা বলার সময় সংস্থাটির সাবেক প্রধান মুখপাত্র ক্রিস্টোফার গুনেস বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ-কে সাহায্য স্থগিত করার এই সিদ্ধান্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি গাজায় আরও দুর্দশা সৃষ্টি করতে পারে।

 

গুনেস বিশ্বাস করেন, ইউএনআরডব্লিউএ তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কর্মীদের বরখাস্ত করে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের জিরো-টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করেছে।

তিনি বলেন, ‘১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ বর্তমানে ইউএনআরডব্লিউএ ভবনে এবং তার আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পশ্চিমা দেশগুলো যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা রোধ করার চেষ্টা করছে তখন ইউএনআরডব্লিউএ-এর পরিষেবাগুলো হ্রাস পেলে তা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে।’

এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বিবিসিকে বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সাথে ইউএনআরডব্লিউএ-এর বেতনভুক্ত কর্মীরা জড়িত ছিল। মার্ক রেগেভ বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরা ৭ অক্টোবরের হামলাকে ‘উন্মুক্তভাবে উদযাপন’ করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি একজন ইসরায়েলি বন্দির কথাও উল্লেখ করেন, যিনি তার মুক্তির সময় বলেছিলেন- তাকে ‘এমন একজনের বাড়িতে রাখা হয়েছিল যিনি ইউএনআরডব্লিউএর জন্য কাজ করেছিলেন’।

তিনি বলেন, ‘তাদের একটি ইউনিয়ন আছে যা হামাস নিয়ন্ত্রিত এবং আমি মনে করি এখনই সময় এসেছে যে জাতিসংঘ ইউএনআরডব্লিউএ এবং হামাসের মধ্যে এই সংযোগগুলো তদন্ত করবে।’

আর এই অভিযোগগুলো জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান দাতাদের কাছ থেকে বেশ কড়া প্রতিক্রিয়া সামনে এনেছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাজ্য হতবাক। জঘন্য এই সন্ত্রাসবাদের কাজকে ব্রিটিশ সরকার বারবার নিন্দা করেছে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্য সাময়িকভাবে ইউএনআরডব্লিউএ-এর ভবিষ্যৎ অর্থায়ন বন্ধ করে দিচ্ছে। একইসময়ে আমরা এই অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করছি।’

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থায়ন স্থগিত করছে। এছাড়া হামলায় জাতিসংঘের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’ বলেও জানানো হয়।

ইইউ বলেছে, তারা ‘সম্পূর্ণ এবং ব্যাপক তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে’ পরবর্তী পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি ‘এই খবরে আতঙ্কিত’।

ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ‘বিলম্ব না করে সত্য কী ঘটেছে তা জানার জন্য অভিযোগের সম্পূর্ণ তদন্ত করা হচ্ছে। মানবিক সহায়তা প্রদানে এজেন্সির ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য আমি অবিলম্বে এই স্টাফ সদস্যদের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকলে যেকোনও কর্মীকে জবাবদিহি করা হবে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, যুদ্ধের পর গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম বন্ধ করার লক্ষ্য ছিল তার।

তবে ফিলিস্তিনি বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রী হুসেইন আল-শেখ বলেছেন, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটির জন্য কিছু দেশের সহায়তা বন্ধ করার এই সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক ও মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে’।

আল-শেখ পশ্চিমা দাতাদের অবিলম্বে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করে বলেছেন: ‘আমাদের এই আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য সর্বাধিক সহায়তা প্রয়োজন।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: