রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা ইসরাইল-হামাস সংঘাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ভূ-রাজনৈতিক চিত্র যে বদলাচ্ছে, এগুলো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে আরও উদ্বেগের বিষয় হলো যে, সংঘর্ষগুলো খালি চোখে দেখা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় কূটনৈতিক সংঘর্ষের মধ্যে, চীন সম্ভবত তার ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মোতাবেক, চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের লপ নুরে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
একাধিক উপগ্রহ চিত্রে সেই ছবি ধরা পড়েছে। প্রায় ৬০ বছর আগে যেখানে চীন তার প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল, সেই ঘাঁটিতে সম্প্রতি একাধিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যন্ত্রের আমদানি লক্ষ্য করা গেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি পাহাড়ের পাশে টানেলে খনন ও নির্মাণ পুনরায় শুরু করেছে। অতীতে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য এই টানেলগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। স্যাটেলাইট চিত্রগুলো এলাকার চারপাশে বেশ কয়েকটি নতুন রাস্তা যুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে একজন পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ টং ঝাও বলেছেন, ‘সব প্রমাণ চীনের ইঙ্গিত করে চীন আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে লপ নুরে পর্যবেক্ষণ করা উন্নয়নগুলো চীনের পারমাণবিক অবকাঠামোর মধ্যে একটি ব্যাপক আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। তারা সতর্ক করেছে যে এটি সামরিক অস্ত্রাগারের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং পারমাণবিক প্রতিযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
বিষয়টি এমন একসময়ে সামনে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সমীকরণ স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। দুটি দেশ সম্প্রতি কিছু সামরিক শর্তে পুনরায় যুক্ত হতে শুরু করেছে এবং নতুন পারমাণবিক পরীক্ষার চারপাশের গুঞ্জন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। ড. রেনি ব্যাবিয়ারজ, ন্যাশনাল জিওস্প্যাশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সাবেক বিশ্লেষক, যিনি প্রমাণ সামনে এনে বলেছিলেন যে, গভীর শ্যাফটগুলো দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অস্ত্রাগারের জন্য নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
চীন নতুন পারমাণবিক পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই জাতীয় বিবৃতিগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এগুলো ‘পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য। বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন যে, চীন সবসময় আমেরিকা বা রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগার নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিক উসকানিমূলক বক্তৃতায় পারমাণবিক অস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আরও বিপজ্জনক হুমকি দিয়ে তার জবাব দিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে একজন বিশিষ্ট পারমাণবিক পদার্থবিদ রিচার্ড এল গারউইন বলেন, অন্য কেউ পাছে এগিয়ে যায় চীন সেটি মেনে নিতে পারবে না। কারণ তারা সবসময় এগিয়ে থাকতে চায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: