সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেকে ঘিরে সতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের পক্ষে নির্বাচনি পথসভায় "নারী নের্তৃত্ব হারাম" বলা সুন্দরবন ইউনিয়নের সেই চেয়ারম্যান একরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে একরাম ইজারাদারকে অভিযুক্ত করে মামলাটি রুজু হয় বলে জানিয়েছেন মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম।
ইকরাম ইজারাদার মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭ এর বিধান এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১১ (ক) অনুযায়ী মোংলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) মোংলা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। মোংলা থানায় মামলা নম্বর ২৫/২৫, তারিখ ২২/০১/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ হিসেবে রুজু করা হয়েছে। ইসির নির্দেশে এ মামলা করেছেন এই কর্মকর্তা।
এজাহারে বলা হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়া নামক স্থানে জাতীয় সংসদের আসন নং- ৯৭ বাগেরহাট-৩ এলাকার এক সভায় "নারী নেতৃত্ব হারাম" বলে অবমাননাকর ও আক্রমণাত্বক বক্তব্য দেন। এতে এই ব্যক্তি (একরাম ইজারাদার) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭ এর বিধান এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (ক) বিধির বিধান লঙ্ঘন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
বর্ণিত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১৮ এর অধীনে স্মারক নং- ১৭.০০.০০০০.০৪৫.৪৮, ০০৭.২৩-১১৬, তারিখ- ১১/০১/২০২৪ খ্রীঃ এজাহার দায়ের করার জন্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীকে (মোংলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
'নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে নৌকার বিপক্ষে ভোট চেয়ে আলোচনায় আসেন ইকরাম ইজারাদার। পরে তাকে তলব করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান বাগেরহটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) আদালতের বিচারক ওবায়দা খানম।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচারণ বিধিমালার ১১(ক) ধারা উল্লেখ আছে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করিয়া বক্তব্য প্রদান বা কোন ধরণের তিক্ত (উস্কানিমূলক বা মানহানিকর) বক্তব্য, লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিকে আঘাত লাগে এমন কোন বক্তব্য প্রদান করিতে পরিবেন না।
কিন্তু সুন্দরবন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর ইউনিয়নে গত ৩০ ডিসেম্বর ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারদারের নির্বাচনী এক পথসভায় বলেন, 'আমরা গজবের ভেতর নিমজ্জিত আছি। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জনমনে কোনো স্বস্তি নেই, শান্তি নেই; তার কারণ, নারী নেতৃত্ব হারাম। নারী নেতৃত্বের অধীনে আমরা এখানে রয়েছি। আমাদের ভোটটা আমরা বেগম হাবিবুন নাহারকে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) দুইবার (ভোট) দিয়ে আমরা নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করছি। তাই আমাদের এখানে কোনো সুখ-শান্তি অবস্থান করে না। যেটা সত্য, সেই কথা আমি এখানে আপনাদের কাছে বলে গেলাম। উনি একজন নারী, উনি রাজনীতি আর সমাজনীতির বোঝেন কি? কিছুই বোঝেন না।’
এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে সংসদ নির্বাচনের পরে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবীতে মোংলায় কয়েক দফা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, সংসদ নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘন করায় ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদারের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়েছে। এখন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রীস আলী ইজারাদার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে পরাজিত হন। হাবিবুন নাহার পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৪১৭ ভোট। ইদ্রিস আলী ইজারাদার পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৫২ ভোট।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: