২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর মোংলা বন্দর উন্নয়নের জন্য সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে এবং বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে। ফলে ক্রমান্বয়ে মোংলা বন্দর গতিশীল হতে থাকে। যার কারণে প্রতিবছর বিদেশি জাহাজ, কার্গোহ্যান্ডলিং, গাড়ি আমদানিতে রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আ: খালেক এসব কথা বলেন।
আগামী দিনে মোংলা বন্দর আরো কর্মচঞ্চল ও স্মার্ট বন্দর হিসেবে বিশ্বের বুকে সমুন্নত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদা মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, ক্লে টাইলস, রেশমি কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
সভাপতির বক্তব্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, মোংলা বন্দরের চলমান ড্রেজিংয়ের ফলে সম্প্রতি ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি মানা সরাসরি মোংলা বন্দরে আগমন করে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বন্দর জেটিতে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়েছে। ২০২২-২৩ ইং অর্থবছরে বন্দরে ৮২৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে ও ৯৯.০৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো, ২৬৫৮৩টি ইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ১৩ হাজার ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি এবং ৩০,২৪১.৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে।
মোংলা বন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে। বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ, কার্গো ও কনটেইনার সংরক্ষণের সুবিধাদি বৃদ্ধি এবং আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করা হবে। এ ছাড়া আধুনিক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জয়মনিরঘোলে কার ইয়ার্ড নির্মাণ, জয়মনিরঘোলে মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, আকরাম পয়েন্টে ভাসমান জেটি নির্মাণ (সমীক্ষায় সুপারিশকৃত হলে), হিরণ পয়েন্ট পাইলট স্টেশনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জ্যাফর্ড পয়েন্টে লাইট হাউস ও ভবন নির্মাণ, যাবতীয় সুবিধাদিসহ হেলিপ্যাড ও হ্যাঙ্গার নির্মাণ ও হেলিকপ্টার ক্রয়, উদ্ধারকারী জলযান সংগ্রহ করা হবে।
অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন (জিটুজি প্রকল্প), মোংলা বন্দর চ্যানেলে পাঁচ বছর মেয়াদি সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প, পশুর চ্যানেলে নদী শাসন এবং মোংলা বন্দরের আরো সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প।
এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরের চ্যানেলে ৮ দশমিক ৫ সিডি গভীরতা অর্জিত হবে। এতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ মোংলা বন্দরে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে বার্ষিক প্রায় আট লাখ টিইউজ কনটেইনার, চার কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্দর সদর দপ্তর মোংলা ও খুলনাস্থ বন্দর এলাকায় আলোকসজ্জা করা হয়। রাত ১টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি সব জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজানো হয়। বন্দরের অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে দোয়া, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় কবুতর ও বেলুন ওড়ানোর পর কেক কাটা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় প্রধানসহ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত ১৯৫০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পিডি-৪(৪৮)/৫০/১সংখ্যক গেজেট নোটিফিকেশন বলে ১ ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে চালনা পোর্ট নামে এ বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি অ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তী সময়ে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: