‘রহিমা বেগমের (৫২) ফিরে আসার প্রত্যাশা আমরাও করছিলাম। আমরাও চাইছিলাম তার যেন কোনও ক্ষতি না হয়। বাবা জেলে, তাকে মুক্ত করার চেষ্টার চেয়ে রহিমা বেগমকে উদ্ধার বা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা ও আগ্রহ ছিল বেশি। যাই হোক, আল্লাহর রহমতে অবশেষে পুলিশই তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। প্রমাণিত হলো, রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আমার বাবা হেলাল শরীফ নির্দোষ। কিন্তু তাকে তো বিনা দোষে জেল খাটতে হচ্ছে। এর ফয়সালা কে দেবে? আল্লাহ সব সময় সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আমরা এখন চূড়ান্ত সত্য দেখার অপেক্ষায়।’
নিখোঁজ রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর ওই ঘটনায় মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকা হেলাল শরীফের মেয়ে অন্তরা ফাহমিদা এভাবেই গণমাধ্যমের কাছ তার প্রতিক্রিয়া জানান। অন্তরা শনিবার রাতে রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার বাবা বিনা দোষে কেন শাস্তি পাবেন? বাবাকে কবে মুক্ত করা হবে?’
এর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অন্তরা ফাহমিদা ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘অনেকে আমার কাছে প্রশ্ন করছেন, আমার বাবার গ্রেফতার হওয়ার কারণ কী? আমার বাবার দোষ কী ছিল? আসলে আমার বাবার দোষ এটা যে, আমার বাবা হেলাল শরীফ ও কিবরিয়া চাচ্চু দুজনে মিলে জমি কিনেছেন। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে টাকা জমিয়ে জমি কিনেছিলেন। আমার বাবা ও চাচ্চু রহিমা বেগমের সৎছেলে ও মোহরির কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। সৎছেলেদের এ জমি বিক্রি করাটা রহিমা বেগম মেনে নিতে পারেননি। তিনি একাই এই জমি ভোগ-দখল করতে চেয়েছিলেন।
‘এই জমিটা কিনেছিলেন আমার বাবা ও কিবরিয়া চাচ্চু কয়েক বছর আগে। কিছুদিন আগে তারা এই জমির দখলে যেতে চান। তখন রহিমা বেগম জমির দখলে বাধা দিতে বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেন। তিনি এই মামলার আগেও মামলা করেছেন। যখন এই পাঁচ জন আসামি জমির ওই মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন তখন তারা নতুন করে এই মামলাটি দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই মামলার সঠিক তদন্ত হলে আমার বাবাসহ আরও যে চার জনকে সন্দেহের ভিত্তিতে দোষারোপ করা হয়েছে তারা সবাই নির্দোষ, মুক্তি পাবেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন খুব দ্রুত সবাই মুক্তি পান। সবাই দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করবেন।’
নিখোঁজ রহিমা খাতুনকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। খুলনার দৌলতপুরের বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজের ২৮ দিন পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম (৫২)। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেন না। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।
এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সাথে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: