চার বলে তিনটি উইকেট হারিয়ে ম্যাচটা যখন কঠিন হয়ে গিয়েছিলো তখনও এক প্রান্তে আগলে ছিলেন রোমানা আহমেদ। সঙ্গী হিসেবে পেলেন সালমা খাতুনকে। সাবেক দুই অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর এক জয়ই পেল বাংলাদেশের মেয়েরা। পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব শুরু করল নিগার সুলাতানার দল।
রোববার হারারেতে পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২০১ রান করে পাকিস্তানের মেয়েরা। জবাবে ২ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
ম্যাচটা ছিল বিশ্বকাপের মুল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী পাকিস্তান। তাদের বিপক্ষে কী দারুণ সূচনাই না করল বাংলাদেশের মেয়েরা। মাঝে অবশ্য মন্থর ব্যাটিংয়ে কাজটা কিছুটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু রোমানার কার্যকরী ফিফটিতে জয় পায় বাংলাদেশই।
৪৮তম ওভারে ম্যাচের চিত্র বদলে দেন রোমানা। সে ওভারের প্রথম বলে চার মারেন সালমা। এরপর সিঙ্গেলস নিয়ে প্রান্ত বদল করে। পরে টানা তিন বলে তিনটি চার। ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকেই। এরপর দেখেশুনে বাকি কাজটা শেষ করেন রোমানা ও সালমা।
অথচ লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ১০ রানেই ওপেনার মুর্শিদা খাতুনকে হারিয়েছিল তারা। দ্বিতীয় উইকেটে শারমিন আক্তারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ফারজানা হক। শুরুর ধাক্কা সামলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। তবে রানের গতি সে অর্থে বাড়াতে পারেননি তারা। মন্থর ব্যাটিংয়ে চাপ বাড়তে থাকে।
শারমিনের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। এরপর বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা ছিলেন অধিনায়ক নিগার। কিন্তু হতাশ করেন। ২৬ বল মোকাবেলা করে মাত্র ৪ রান করেন তিনি। তাতে চাপ আরও বাড়ে। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক সেট ব্যাটার ফারজানাও।
দ্রুত তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের হাল রিতু মনিকে নিয়ে ধরেন সাবেক অধিনায়ক রোমানা আহমেদ। নিয়মিত বাউন্ডারি রানের গতিও বাড়ান এ দুই ব্যাটার। ৬১ রানের জুটিতে ম্যাচ জমিয়ে দেন তারা। শেষ পাঁচ ওভারে প্রয়োজন তখন ৪৩ রানের।
কিন্তু এরপরই ছন্দ পতন। রিতু মনির বিদায়ে জুটি ভাঙার পর স্কোরবোর্ডে মাত্র ১ রান তুলতে আরও দুটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লতা মণ্ডল ও ফাহিমা খাতুন দুইজনই নিজের প্রথম বলে আউট হন। ফলে বড় চাপে পড়ে যায় তারা।
কিন্তু এদিন ভিন্ন পণ করেই মাঠে নেমেছিলেন রোমানা। ৪৪ বলে ৫০ রানের দারুণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন সালমা। ১৩ বলে ২টি চারে ১৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৭ বলে ৩৩ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন রিতু মনি। এছাড়া ফারজানা ৪৫ ও শারমিন ৩১ রান করেন।
এদিন টস জিতেছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে বোলিংয়ে শুরুটা করেন দারুণ। দলীয় ৪৯ রানেই পাকিস্তানের প্রথম সারীর ৫টি উইকেট তুলে নেন তারা। অসাধারণ বোলিংয়ে মূলত রিতু মনি ও নাহিদা আক্তার বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন।
কিন্তু এরপর শুরু হয় হতাশার গল্প। ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাচের চিত্র বদলে দেন নিদা দার ও আলিয়া রিয়াজ। ১৩৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তারা। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি মিলে যায় পাকিস্তানের।
১১১ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন নিদা। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৮২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬১ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন আলিয়া। এছাড়া মুনিবা আলীর ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রিতু মনি ও নাহিদা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান নারী দল: ৫০ ওভারে ২০১/৭ (মুনিবা ২২, আয়েশা ৬, জাভেরিয়া ১২, ওমাইমা ০, নিদা ৮৭, আলিয়া ৬১*, ফাতিমা ৫, দিয়ানা ১*; জাহানারা ৮-০-৪০-০, সালমা ১০-২-৩২-১, রিতু ৯-০-৩৬-২, নাহিদা ১০-১-২৫-২, রুমানা ৮-০-৪০-১, ফাহিমা ৩-০-১৩-০, লতা ২-০-১৩-০)
বাংলাদেশ নারী দল: ৪৯.৪ ওভারে ২০২/৭ (মুরশিদা ৯, শারমিন ৩১, ফারজানা ৪৫, নিগার ৪, রুমানা ৫০*, রিতু ৩৩, লতা ০, ফাহিমা ০, সালমা ১৮*; আনাম ১০-১-৩০-১, দিয়ানা ৮-০-৪১-০, ফাতিমা ৪.৪-০-৩৫-১, নাশরা ১০-২-২৪-২, নিদা ১০-১-১৭-১, ওমাইমা ৭-০-৪৪-২)
ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: রুমানা আহমেদ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: