ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ মানেই যে উত্তাপ-উত্তেজনা তার প্রমাণ আজ মিলেছে আরও একবার। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দল আজ মাঠে নেমেছিল একে অপরের বিপক্ষে। তবে খেলা শুরুর আগেই গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ চালায় ব্রাজিলিয়ান পুলিশ। এ সময় মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজ দলের ফুটবলারদের নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান লিওনেল মেসি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ম্যাচ মাঠে গড়ায় প্রায় আধঘন্টা দেরিতে। এই উত্তাপ পরে ছড়িয়েছে ম্যাচেও। তবে শেষ পর্যন্ত নিকোলাস ওতামেন্দির গোলে স্বাগতিকদের হারিয়ে ১-০ গোলের জয় পেয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে হেরেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উভয় দলই। ফলে দুই দলের জন্যই আজ ছিল জয়ে ফেরার তাড়া। এমন লক্ষ্য নিয়েই আজ ঘরের মাঠ মারাকানা স্টেডিয়ামে আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে মাঠে নামে সেলেসাওরা। খেলা শুরুর আগের উত্তপ্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে মাঠের লড়াইয়ে মনোযোগী হয় দুই দল।
তবে গ্যালারির এই উত্তেজনা যেন আজ ছড়িয়েছে মাঠে ফুটবলারদের মাঝেও। দুই দলই আজ খেলেছে কিছুটা মারমুখী ভঙ্গিতেই। এতে অবশ্য এগিয়ে ছিলেন সেলেসাওরাই। পুরো ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের দ্বারা ১৬ বার ফাউলের স্বীকার হয়েছেন মেসিরা।
খেলার শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের জালে লক্ষ্যভেদ করার একটি সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। তবে মার্কোস একুনিয়ার নেয়া বাঁ পায়ের শট জালের দেখা পেতে ব্যর্থ হয়। এরপর নয় মিনিটের সময় মেসির দেয়া পাসে বল পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি নিকোলাস ওতামেন্দী।
এদিকে খেলা শুরুর পর থেকেই আজ আলবিসেলেস্তে ফুটবলারদের উপর কিছুটা চড়াও হয়েই খেলেছে গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা। একের পর এক বাজে ট্যাকলে ব্যস্ত রেখেছে আর্জেন্তাইন ফুটবলারদের। ফলে ৫ মিনিটের মাথায়ই হলুদ কার্ড দেখেন জেসুস। এরপর ১৪ এবং ২৮ মিনিটে রাফারি হলুদ কার্ড দেখান রাফিনহা এবং কার্লোস অগাস্টোকে।
এদিকে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হবার আগে গোল করার একাধিক সুযোগ এসেছিল ব্রাজিলের সামনে। তবে মার্কিনিয়োস, রগ্রিগোরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। কোনো দলই লক্ষ্যভেদ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত গোল শূন্য ড্র নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফেরার পর অবশ্য কিছুটা ছন্দ ফিরে পায় সেলেসাওরা। বেশ কয়েকবারই আক্রমণে আলবিসেলেস্তেদের রক্ষণে চিড় ধরিয়ে গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে জেসুসরা। ৫৪ মিনিটে রাফিনফার নেয়া একটি শট ব্যর্থ হয় জালের দেখা পেতে। এর ৪ মিনিট গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লির নেয়া একটি শটও ব্রাজিলকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।
এদিকে ব্রাজিলের একের পর এক সুযোগ হারাবার ফাঁকে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৬৩ মিনিটে জিওভানি লা সেলসোর দেয়া পাসে বল পেয়ে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠান নিকোলাস ওতামেন্দি। ফলে এক গোলের লিড পেয়ে যায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। পিছিয়ে পড়ার পর ৭৫ মিনিটের সময় দলকে সমতায় ফেরানোর একটি সুযোগ পেয়েছিলেন তরুণ ফুটবলার এন্ড্রিক। কিন্তু তার নেয়া শটও আজ সেলেসাওদের ভাগ্য ফেরাতে ব্যর্থ হয়।
এদিকে ম্যাচের ৭৮ মিনিটের সময় মেসিকে তুলে নেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। তার বদলে মাঠে নামেন এঞ্জেল দি মারিয়া। আর সেলেসাওদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে লাল কার্ড। ৮১ মিনিটের সময় ফাউল করে বসেন জোয়েলিনটন। ফলে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। দশ জনে পরিণত হওয়া সেলেসাওরা এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় সেলেসাওদের।
এদিকে খেলা শুরুতে দুই দলের জাতীয় সংগীতের সময় ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা দুয়ো দিতে থাকেন আর্জেন্টাইনদের উদ্দেশ্য করে। এক পর্যায়ে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে আসেন ব্রাজিলের পুলিশ।
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং এক্সে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করছে ব্রাজিলিয়ান পুলিশ। এ সময় গ্যালারির উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মেসিদের মাঝেও। আলবিসেলেস্তে গোলরক্ষক বাজপাখি খ্যাত এমিলিয়ানো মার্টিনেজ গ্যালারির বাঁধা টপকে ঝাপিয়ে পড়েন পুলিশের লাঠিচার্জ থেকে সমর্থকদের বাঁচাতে।
এক পর্যায়ে আলবিসেলেস্তে অধিনায়ক মেসি দলের ফুটবলারদের নিয়ে ড্রেসিং রুমে চলে যান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আধ ঘণ্টা পর শুরু হয় খেলা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: