ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো আফগানিস্তান। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে আফগানরা। এতে লিগ পর্ব থেকেই বিশ্কাপ শেষ করতে হলো আফগানিস্তানকে।
৯ ম্যাচে ৪ জয় ও ৫টি হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে আছে আফগানিস্তান। তবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ আটের মধ্যে থাকায় প্রথমবারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো আফগানরা। ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
আজমতুল্লাহ ওমরজাইর হাফ-সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান করেছে আফগানিস্তান। ১০৭ বলে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন ওমরজাই। জবাবে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের অনবদ্য ৭৬ রানে ১৫ বাকী থাকতে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
জয় দিয়ে লিগ পর্ব শেষ করলো প্রোটিয়ারা। ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আহমেদাবাদ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৮ ওভারে ৪১ রান তুলেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তবে ভলো শুরুটা ধরে রাখতে পারেনি আফগানিস্তান। ১১তম ওভারের মধ্যে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। গুরবাজ ২৫, ইব্রাহিম ১৫ ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি ২ রানে আউট হন।
৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে ফেরান রহমত শাহ ও আজতুল্লাহ ওমরজাই। উইকেট পতন ঠেকিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৭৮ বলে ৪৯ রান যোগ করেন তারা। রহমতকে ২৬ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন পেসার লুঙ্গি এনগিডি।
দলীয় ৯৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ উইকেটরক্ষক ইকরাম আলিখিল ১২ ও মোহাম্মদ নবি ২ রানে বিদায় নেন। ১১৬ রানের মধ্যে আফগানদের ছয় ব্যাটার প্যাভিলিয়নে ফিরে।
এ অবস্থায় লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন ওমরজাই। সপ্তম উইকেটে রশিদ খানকে নিয়ে ৬১ বলে ৪৪ এবং অষ্টম উইকেটে নূর আহমেদের সাথে ৪৯ বলে ৪৪ রান যোগ করেন ওমরজাই। জুটিতে রশিদ ১৪ ও নূর ২৬ রান অবদান রেখে আউট হন।
সতীর্থরা আসা-যাওযার মধ্যে থাকলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন ওমারজাই। ৪৯তম ওভার শেষে ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারে ১ রানের বেশি নিতে না পারায় চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন এই ডান হাতি ব্যাটার। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১০৭ বল খেলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন তিনি।
ইনিংসের শেষ বলে নাভিন রান আউট হলে ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান।
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে পেসার জেরাল্ড কোয়েৎজি ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এ ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপ এক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ শিকারীর রেকর্ড গড়লেন কোয়েৎজি।
এই ইনিংসে ৬টি ডিসমিসাল করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। এতে বিশ্বকাপে এ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬টি ডিসমিসালে অস্ট্রেলিয়ার এডাম গিলক্রিস্ট, পাকিস্তানের সরফরাজ আহমেদ ও মার্ক বাউচারের রেকর্ড স্পর্শ করলেন ডি কক। এবারের বিশ্বকাপে সর্বমোট ১৯টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি। এতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এক আসরে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ডও গড়লেন ডি কক।
জয়ের জন্য ২৪৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে দারুন সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১ ওভারে ৬৪ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও তেম্বা বাভুমা। ৩টি চারে ২৩ রান করা বাভুমাকে শিকার করে আফগানিস্তানকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার মুজিব উর রহমান।
বাভুমার ফেরার পরই প্যাভিলিয়নে জায়গা করে নেন ডি ককও। আরেক স্পিনার নবির শিকার হন ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৪২ রান করা ডি কক। এই ইনিংসের সুবাদে নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রকে সরিয়ে আবারও চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫৯১ রানের মালিক হলেন ডি কক।
২ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারের বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ বলে ৫০ রান তুলে দলকে চাপমুক্ত করেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও আইডেন মার্করাম। ২৫ রান করা মার্করামকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন আরেক স্পিনার রশিদ।
এরপর চতুর্থ উইকেটে হেনরিচ ক্লাসেনের সাথে ২৩ ও পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৪৩ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের আশা ধরে রাখেন ডুসেন। ক্লাসেনকে ১০ রানে রশিদ ও মিলারকে ২৪ রানে আউট করেন নবি। ক্লাসেনকে শিকার করে আফগানিস্তানের পক্ষে বিশ্বকাপে এক আসরে সর্বোচ্চ ১১ উইকেটের মালিক হন রশিদ। ২০১৫ সালে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার শাপুর জাদরান।
দলীয় ১৮২ রানে মিলার ফেরার পর আন্দিলে ফেলুকুওয়াকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন ডুসেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৫ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচ সেরা ডুসেন। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় অনবদ্য ৩৯ রান করেন ফেলুকুওয়াও।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: