তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৫ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সিরিজ শুরুর আগে বলেছেন, লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিজেদের ইতিহাসে সেরা ওয়ানডে দলটিই মাঠে নামবে এবার। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরের মাঠে তাদের হারাতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুরুর ১৫ ওভারে চোখ রেখছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
সুপারস্পোর্ট পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো না হলেও পরে যে সুর আর তালে ইনিংস বাঁধলেন দুই ওপেনার তামিম আর লিটন দাস, পরে সেই ইনিংসের বৈঠা ধরলেন সাকিব আল হাসান আর ইয়াসির আলি রাব্বি। লিটন, সাকিব, রাব্বির অর্ধশতকের উপর ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করেছে সফরকারীরা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে এটিই টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। আগেরটি ২৭৮ রানের, ২০১৭ সালে।
সেঞ্চুরিয়ানের এই মাঠটি ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ সহায়ক। এখানে চারশ ছুঁইছুঁই (৩৯২) দলীয় স্কোর দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশ দলের ইনিংসের শুরুটা সে অর্থে সুবিধার হয়নি। দিবারাত্রির ওয়ানডেতে যেখানে পাওয়ার-প্লেতে গড় স্কোর ৫৫, সেখানে লিটন-তামিম তুললেন মোটে ৩৩ রান। তামিম বলেছিলেন শুরুর ১৫ ওভার দেখেশুনে কাটাতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব। সেই ভাবনা থেকেই হয়তো এমন সাবধানী শুরু। প্রথম ১৫ ওভারে দলীয় রান মোটে ৪৬, যদিও উইকেট হারায়নি কোনো।
তামিমের আউটের পর ফিফটির স্বাদ পান দুর্দান্ত ছন্দে থাকা লিটন। যদিও অর্ধশতক করার পর নিজের ইনিংসটাকে আর টানতে পারেননি তিনি। আগের বলে দুই রান নিয়ে ফিফটি করেন লিটন। ওয়ানডেতে তার টানা তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। পরের বল সরে গিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল নিচু হয়ে যাওয়ায় ব্যাটে খেলতে পারেননি। হয়ে যান বোল্ড। ৬৭ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫০ রান করেন লিটন।
দ্রুত ২ উইকেট হারানো দলটিকে টেনে তোলার দায়িত্ব পড়ে মুশফিকুর রহিম আর ‘আলোচিত’ সাকিব আল হাসানের কাঁধে। কিন্তু এ যাত্রায় ব্যর্থ মুশফিক। নিজের প্রিয় শট স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন। বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজের করা বলটি ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উঠে যায়, শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মুশফিক। এক চারে ১২ বলে তিনি করেন ৯ রান।
২৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে সফরকারীরা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলে সাকিব-রাব্বি জুটি। নান্দনিক ব্যাটিংয়ে সাকিব যে ৭৭ রানের ইনিংস খেললেন, সেটি অনায়াসে শতকে রূপ নিতে পারতো। তবে সমর্থকদের মনে এমন ভাবনার উদয় হয়েছে নিশ্চয়ই, এই সাকিব শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় না গেলে হয়তো মহাবিপদেই যে পড়তে হতো দলকে! রাব্বিকে সঙ্গে নিয়ে বিপদে পড়তে যাওয়া দলকে টেনে তুলনেন তিনিই।
একশর উপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে দলের রান বাড়িয়েছেন সাকিব-রাব্বি। যেখানে ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলটি লং অফ দিয়ে উড়িয়ে বাউন্ডারি পার করে ফিফটি তুলে নেন সাকিব। ৫০ বলে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ৫০তম হাফ সেঞ্চুরির দেখা। পরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হাঁটছিলেন শতকের দিকে, কিন্তু ইনিংসে ৪২তম ওভারে ব্যক্তিগত ৭৭ রানের মাথায় লুঙ্গি এনগিডির নিচু ফুলটস বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। ৬৪ বলের ইনিংসে ৩টি ছক্কা ও ৭টি চার মারেন।
সাকিবের আউটের মধ্য দিয়ে ভাঙে পঞ্চম উইকেটের ৮২ বল স্থায়ী ১১৫ রানের জুটি। এই পার্টনারশিপ ভাঙার আগেই অবশ্য রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন সাকিব-রাব্বি। এই ম্যাচেই তামিম-লিটনের ৯৫ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি। সেটাকে দুইয়ে নামিয়ে দেশকে প্রথম শতরানের জুটি এনে দিলেন সাকিব-রাব্বি।
সাকিব আউট হওয়ার আগে অবশ্য নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির স্বাদ পান রাব্বি। তবে সাকিবের বিদায়ের পর লিটনের মতো তিনিও ফেরেন সমান ৫০ রানে। দুই ছক্কা ও চারটি চারে ৪৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। এরপর কাগিসো রাবাদাকে পুল করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন। টাইমিং করতে পারেননি, সহজ ফিরতি ক্যাচ নেন বোলার।
শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন আফিফ হোসেন, কিন্তু স্থায়ী হতে পারেননি। ১৩ বলে খেলা ১৭ রানের ইনিংসে সমান ১টি চার-ছয় মারেন এই তরুণ। আফিফ আউট হলে দলীয় স্কোর বাড়াতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ফেরেন ১৭ বলে ২৫ রানে। পরে মেহেদী হাসান মিরাজের ১৩ বলে ১৯ এবং তাসকিন আহমেদের ৫ বলে ৭ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৩১৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মহারাজ ও ইয়ানসেন ২টি করে উইকেট নেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ৩১৫ রানের। পরিসংখ্যান যেমন বলছে সুপারস্পোর্ট পার্কে প্রচুর রান হয়, সাথে সাথে বলে আরেকটা তথ্যও, এখানে আগে ব্যাট করা দলেরই জয়ে পাল্লা ভারি। টাইগার ব্যাটসম্যানরা তো তাদের কাজটা ঠিকঠাইকই করলো, ইতিহাস বদলাতে এবার দায়িত্ব নিতে হবে বোলারদের।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: