আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কৃত ও গ্রেপ্তার হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেখানে তাকে তার জয়যাত্রা টিভির নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বিষয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। এছাড়া টাকা না দিলে এক ব্যক্তির কর্মকান্ড ভাইরাল করে দেয়ার কথাও বলতে শোনা যায়। সময় ট্রিবিউনের কাছে অডিও দুটি সংরক্ষিত আছে।
অডিওতে শোনা যায়, নিজের ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে কথপোকথনে বেরিয়ে এসেছে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মেহেদী নামে মালয়েশিয়ার এক ব্যক্তিকে তার আইপি টিভি চ্যানেল জয়যাত্রার মালয়েশিয়ার ব্যুরো চিফের পদ দেবেন বলে জানান হেলেনা।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা গেছে ব্যক্তিগত সহকারীকে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলছেন, ‘মালয়েশিয়ার মেহেদী আছে না? ও বারবার আমাকে ডিস্টার্ব করতেছে। এসএমএসে। বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে কল করাচ্ছে। তুমি তাকে বলবা ঠিক আছে, আপনি পাঁচ লাখ টাকা দেন। ম্যাডামকে আমি রাজি করাই। ইউ মেক পলিসি অ্যাপ্লাই। বুঝছ? পলিসি মেক না করলে মেকার হতে পারবে না।’
অন্য প্রান্ত থেকে ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ‘আজকে কি কল করেছিল ম্যাম?’
হেলেনার জবাব, ‘নানা মানুষকে দিয়ে আমাকে ফোন করাচ্ছে। পুলিশ আছে না একটা?’
ব্যক্তিগত সহকারী ফের প্রশ্ন করেন, ‘পারভেজের কথা কী বলে?’
হেলেনা বলেন, ‘ওর কথা বাদ দাও। তুমি বলো মাসে এক লাখ করে টাকা দেন। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর আপনাকে ব্যুরো চিফ বানাইয়া দেব মালয়েশিয়ার। আমাদের তো এখন টাকা দরকার, অন্য কোনো কথা নাই। বলবা কি, আমাকে দিয়েন না। অফিসকে দেন।’
'পাঁচ লাখ টাকা দেন ব্যুরো চিপ বানিয়ে দিবো'
অপর অডিও ক্লিপসের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি হেলেনা জাহাঙ্গীরকে একজন বলছিলেন, কাল পরশু নতুন একটা গেস্ট পাঠাব। বিএনপির এক নেতা আছে তো! হেলেনার প্রশ্ন ছিল, বিএনপি না আওয়ামী লীগ?
অপরপ্রান্ত থেকে বলা হচ্ছিল, আরে বিএনপির। মোংলার রামপাল আছে না? ওখানের এমপি ইলেকশন করছিল। হেজা বলছিলেন, ‘টাকা টুকা দেবে?’
সেই লোক বলছিলেন, আরে নাহ। এমনি যাবে। হেলেনার উত্তর ছিল, টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। আমি তো ভাইরাল করার ওস্তাদ।
অপরপ্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, প্রাথমিক স্টেজে তো চাওয়া যায় না! আগে ইনভলব করি। এদের তো পরে মুরগি বানাব।
‘টাকা না দিলে ভাইরাল করে দিবো, আমি ভাইরাল করার ওস্তাদ’
এদিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও পল্লবী থানায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে রোববার গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করে র্যাব। শুক্রবার রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি এবং পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়। পরে গুলশান থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেলেনাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: