ইউনিভার্সিটির টিচার থাকাকালীন যখন এক্সাম হলে ডিউটি দিতাম, অবাক হয়ে খেয়াল করতাম, প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট কতটা মেন্টাল প্রেশারে থাকে। ওদের সিরিয়াসনেস দেখে আমার নিজেরই মেন্টাল প্রেশার বেড়ে যেতো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতাম আমার আন্ডারগ্র্যাড লাইফের ৪০ টা পরীক্ষার কথা ভেবে। এতোকিছু মনে রেখে পরীক্ষার হলে সব উগলে দেয়া খুব একটা সহজ বিষয় নয়।
আশার কথা, প্রত্যেক ব্যাচে কিছু ব্যাকবেঞ্চার স্টুডেন্ট থাকতো যারা সবসময় 'ডোন্ট কেয়ার'। পরীক্ষার দিন এই 'ডোন্ট কেয়ার' স্টুডেন্টদের হাসিখুশি মুখগুলো আমার মনে আশা যোগাতো। খানিকটা অবাকও হতাম। এদের অনেকেই সারা রাত না ঘুমিয়ে পরীক্ষা দিতে আসতো, চোখ লাল দেখেই তা বোঝা যেতো, কারন পুরো সেমিস্টার ফাঁকি দিয়ে এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। তারপরেও মুখে এতটুকু অবসাদের চিহ্ন নেই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম এবং করি, এরাই ক্লাসের মধ্যে সবথেকে সুখী মানুষ।
খাতা সাইন করার পর আমি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতাম- A+ হবে? ওরা হাসিমুখে বলতো- স্যার কি বলেন এইগুলা। পাশ করলেই অনেক খুশি। এদের অনেকেই এক ঘন্টা পরে হাসিমুখে সাদা খাতা জমা দিয়ে দিতো। বলতাম, আরো কিছুক্ষণ বসো। আরো কিছু লিখো। হেসে বলতো, স্যার আর কিছু পারি না, বসে থাকা মানে সময় নষ্ট। আমি আরও বেশী অবাক হতাম।
অন্যদিকে ক্লাস টপাররা একের পর এক একস্ট্রা লুজশীট নিতো। টেনশনের ছাপে মুখের দিকে তাকানো যেতো না। খাতা জমা নেয়ার সময় পারলে তারা আরেকটু লিখে যেতে পারলে খুশি হয়। তিন ঘন্টা যেনো যথেষ্ট নয়। পরীক্ষার পর এরা প্রশ্ন মিলিয়ে মিলিয়ে কত গ্রেড পাবে তার হিসাব কষে। সেমিস্টার ফাইনাল শেষে কবে রেজাল্ট দেবে এই চিন্তায় তাদের ঘুম আসে না।
সত্যি বলতে এক অজানা কারনে আমার এই 'ডোন্ট কেয়ার' স্টুডেন্টদের অনেক পছন্দ। এদের অনেকের সাথে এখনো অনেক কথা হয়। হয়তো এখনো কয়েকটা ব্যাকলগ আছে, পাশ করতে পারে নাই, একদিকে ফ্যমিলি প্রেশার, ওইদিকে গার্লফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে গেছে, তারপরও কতটা হাসিখুশি। আমি খুব অবাক হই এবং অনেক আকুতি নিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করি, কিভাবে 'ডোন্ট কেয়ার' হওয়া যায়। কারণ এই একটা জিনিস আমি অনেকবার চেষ্টা করছি, পারি নাই।
মুবিন হাসান,
ব্রিসবেন, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: