বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য, এক চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করার পর আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এদিকে কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় দিনভর আলোচনা-সমালোচনার মুখে সোমবার রাতে ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে দলীয় এক অনুষ্ঠানে মুরাদ হাসান এককালে ছাত্রদলের নেতা ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীরাও বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার কার্যকরী সদস্য, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি এবং ২০০৩ সালে পঞ্চম কংগ্রেসে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ১৯৯৬-৯৮ সেশনে ছাত্রদলের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মুরাদ। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ডা. মেহবুব কাদির। তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, মুরাদ হাসান ১৯৯৩ সাল থেকে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে যখন কলেজ শাখা কমিটি হয়, তখন তিনি প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে বা ১৯৯৭ সালের শুরুতে মুরাদ হাসান ছাত্রলীগে যোগ দেন। ওইসময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ছাত্রদলকে হোস্টেল ছাড়া করে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে মুরাদ হাসান ছাত্রলীগে যোগ দেন। পরে তিনি মেডিকেল শাখার সভাপতি হন। নিজেদের গ্রুপে মারামারি করে মুরাদ হাসানের আঙুল কাটা পড়ে, পরে সার্জারি করেন বলেও জানান ডা. মেহবুব কাদির।
১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে জন্ম মুরাদ হাসানের। তাঁর বাবা মতিয়ার রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক।
১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্য হন মুরাদ। ১৯৯৭ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা শাখার সদস্য, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৫ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মুরাদ। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরাদ হাসান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য মুরাদ হাসান।
২০১৮ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান মুরাদ হাসান। ২০১৯ সালের ১৯ মে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রথম রদবদল আনা হয়। এতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: