বাংলাদেশের পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর অপরাধে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের শাস্তি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নীরব ভূমিকার অপরাধে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনের অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচীতে এসব দাবি জানান সংগঠনটি।
এসময় পাকিস্তান ক্রিকেট দল খেলার মাঠে প্রবেশের সময় "গো ব্যাক পাকিস্তান" ও "শেম অন পাকিস্তান" বলে শ্লোগান দেয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে বিসিবির বাঁধা প্রদান ও পুলিশের অনুরোধে কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালী।
সমাবেশের মিলন ঢালী বলেন, পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের পতাকা মিরপুরে খেলার মাঠে ওড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এবিষয়ে বিসিবির নীরব ভূমিকার অপরাধে বিসিবির চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাকিস্তানের সরবরাহকৃত গ্রেনেড দিয়ে বিএনপি-জামাত একুশে আগস্টে নাজমুল হাসান পাপনের মাতা শহীদ আইভি রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ বিরোধী অপকর্মের বিরুদ্ধে বিসিবি এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে বেঈমানী।
তিনি বলেন, আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ চলাকালীন সময় দুই দেশের পতাকা ওড়ানো হয়। কিন্তু অনুশীলনে কোন দেশের পতাকা ওড়ানো এটাই প্রথম এবং ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় আমাদেরকে এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেখতে হলো যা কখনোই মেনে নিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আইসিসি ও বিসিবিকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের নিকট এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশের পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পাকিস্তানের পতাকা বাংলাদেশে ওড়ানোর পিছনে মূল কারণ খুঁজে বের করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মিলন ঢালী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঙ্গালি গণহত্যার মূলহোতা জেনারেল নিয়াজীর ভাতিজা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এহেন ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নানাবিধ ষড়যন্ত্র এখনো চলমান রয়েছে। পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের এমন ধৃষ্টতায় বিসিবি ও আইসিসির নীরবতার কারণে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এবিষয়ে আইসিসি ও বিসিবিকে অবশ্যই তাদের অবস্থান জাতির সামনে পরিস্কার করতে হবে।
এর আগেও ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশকে কটাক্ষ করেছিল উল্লেখ করে মিলন ঢালী বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা আমরা ভুলে যায়নি। এই মিরপুরেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নারকীয় গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণ চালিয়েছিল। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে সেই মিরপুরে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্য চরম অবমাননাকর। বিসিবির নীরব ভূমিকার অপরাধে বিসিবি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইসিসি, বিসিবি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে বাংলাদেশের জনগণের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের বিচার ও তাদের সকল ধরনের খেলা বাতিলের দাবিতে বিসিবি ঘেরাওসহ আরোও কঠোর কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
শাখার সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে বিসিবির নীরবতা আমাদেরকে হতাশ করেছে। বিসিবির চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবশ্যই দেশের জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও বিসিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিসিবির নীরবতাই সমর্থন করে তারা এধরনের ঘটনা সমর্থন করে। সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা প্রয়োজনে আইনী পদক্ষেপ নিবো। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে মিরপুরের মাটিতে খেলতে দিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: