মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রকৃত বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জে। তার বাবার পেশায় ছিলেন জুট মিলের একজন শ্রমিক। তিনি গাজীপুরের কানাইয়াতে জাহাঙ্গীরের নানার বাড়িতে ঘর জামাই ছিলেন। সেখানেই জাহাঙ্গীর ও তার ছোট ভাই এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রজীবনে মাদ্রাসা হতে ইফতেদায়ি, দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তবে তখন থেকেই ছাত্রলীগের একটি অংশ তাকে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছিল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর যতটা না আওয়ামী লীগের লোক তার চেয়েও বেশি বিএনপি-জামাত ও হেফাজতের লোক। হেফাজতের তাণ্ডবের সময় গাজীপুরের শীর্ষ হেফাজত নেতা আব্দুর রহিম আল মাদানী কে রক্ষা করার জন্য তিনি নিজ বাসভবনে আশ্রয় দেন। শুধু তাই নয়, বোর্ড বাজার জামে মসজিদ থেকে যখন আব্দুর রহিম আল মাদানী কে বয়কট করা হয় তখন জাহাঙ্গীর আলম নিজে তাকে নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে স্বপদে বহাল করে আসেন। তার প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় আব্দুর রহিম আল মাদানী আর রফিকুল ইসলাম মাদানী রা গাজীপুর শহরে অন্তত পঞ্চাশটি আস্তানা গড়ে তোলেন। প্রতিমাসে জাহাঙ্গীর আলম এই সকল মাদ্রাসার প্রধানদেরকে (যার বিশাল একটা অংশ সরাসরি জামায়েতে ইসলামের রাজনীতিতে জড়িত) আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শিক পরামর্শক, তাদের অন্যতম নীতিনির্ধারক, জামাত-শিবিরের বিভিন্ন কর্মশালায় যিনি প্রশিক্ষণ প্রদান কএন, জাতির পিতা ও এদেশের স্বাধীনতায় যার ঘোর আপত্তি সে কথিত জাগ্রত কবি মুহিব খানের সাথেও রয়েছে জাহাঙ্গীর আলমের গভীর সখ্যতা। ২০২০ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইমাম সম্মেলন আয়োজন করেন মেয়র জাহাঙ্গীর। সে অনুষ্ঠানে মুহিব খানকে বিশেষ অতিথী করা হয়য় এবং মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তিকারী ও অসংখ্য রাষ্ট্রবিরোধী কবিতা লেখা এই মুহিব খানকে আতিথী করাকে আওয়ামী রাজনীতির আদর্শের উপর চপোটাঘাত বলেও দাবি করেছিলেন অনেক সিনিয়র নেতাকর্মী।
জাহাঙ্গীর আলম সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামীলীগ মনোনীত কাউন্সিলরদের পাশ কাটিয়ে হাতে গুণা দুই একজন বিএনপি ও জামায়েতের কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে চলাফেরা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক সিনিয়র কাউন্সিলর। ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হতে জঙ্গী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাওলানা মনজুর হোসেন যে কিনা মুফতি হান্নানের সাথে জঙ্গী মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন তার সাথেও রয়েছে মেয়র জাহাঙ্গীরের গভীর সখ্যতা। বঙ্গবন্ধু পরিবার তথা শেখ হাসিনাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য যারা বিগত ৪০ বছরে প্রায় ২১ বার হামলা চালিয়েছে, তাদেরই মতাদর্শের একজন এই মঞ্জুর মাওলানা। মেয়র জাহাঙ্গীর এই মঞ্জুর মওলানা কে গণভবন ও বঙ্গভবন পর্যন্তও নিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রপতির সাথে তার বিশেষ সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তার ছবি তার ২৩ নং কাউন্সিলর কার্যালয়ে এখনো টাঙানো রয়েছে। এই ব্যক্তিকে শুধু সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হচ্ছে না তার আপন বড় ভাই কে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও তাকে সদস্যও করেছেন এই জাহাঙ্গীর।
এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির সাবেক মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অন্তত ২০ জন আত্মীয়স্বজনকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যার মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা, কৃষক লীগের নেতা, শ্রমিক লীগের নেতা অথচ তারা প্রত্যেকেই গত সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের নির্বাচন করেছে।
চলবে......
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: