নারী বিদ্বেষী মন্তব্যকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্রলীগের নেত্রীরা বলেন, নিজের দলের হোক বা বিরোধী দল– দায়িত্বশীল পদে থেকে কোনো নারী নিয়ে এভাবে কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জিয়াসমিন শান্তা বলেন, "রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা কোন ব্যক্তির মুখের ভাষার এই শ্রী শুনে মনে হচ্ছে আমরা দেউলিয়া হওয়ার দারপ্রান্তে দাড়িয়ে আছি।এসব নিয়ে কথা বলার রুচি আসলেই নাই কিন্তু ডোন্ট কেয়ার মুডে থাকলে বা নিরব থাকলে সমাজের অতি বুঝদার শ্রেণী মনে করে অপরাধী তাই হয়ত চুপ মেরে আছে।আর কথা আমাদেরই বলতে হবে নয়ত এসব ফালতু লোকদের মুখ দিয়ে বের হওয়া বিষে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এই লোক এতবড় স্পর্ধা নিয়ে কথা বলে যদি বহাল তবিয়াতে থাকে তাহলে দলের সবাইকে বলছি রাজনীতি করা একটি মেয়েও যদি নৈতিক, চরিত্রবান থেকে থাকে তার দীর্ঘশ্বাস থেকে কেউ রক্ষা পাবেনা।"
তিনি আরো বলেন, "এই প্রতিমন্ত্রী একজনকে ইঙ্গিত করে কথা বলেনি বলেছে সকল মেয়েকে নিয়ে যারা রাজনীতি করে। আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদে আছি,আমি একক কোন মেয়ে না।ছাত্রলীগের হাজার হাজার মেয়ের প্রতিনিধি আমি।আমি আমার অবস্থান থেকে জানতে চাই কোন সাহসে এভাবে মেয়েদের বা ছাত্রলীগের মেয়েদের দিকে এধরনের তকমা ছুড়ে দিয়ে কথা বললেন? প্রশ্ন রাখেন শান্তা।"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেত্রী জানান, তাঁর ভাষা এত খারাপ! ফেসবুকে যখন যাই তখন তার কথাগুলো সামনে আসে। লজ্জা লাগছে সে নিজেকে জয় বাংলার লোক বলে পরিচয় দেয়। এতকিছুর পরে কেমনে এখনো পদে বসে আছেন তা আমার মাথায় আসছে না। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কানে কি এই কথাগুলো পৌঁছে নি?
রোকেয়া হলের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এক ছাত্রলীগ নেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে এরকম বক্তব্য আমাদের সবার জন্য লজ্জাজনক। তবে এখনো সে বহাল তবিয়তে আছে কেন? কোন শক্তিতে সে বহাল? প্রশ্ন তুলেন এ নেত্রী। পাশাপাশি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল কোন বিবৃতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীেদর কে এ ব্যাপারো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকতে দেখা যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া এবং শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সম্পর্কে বলতে শোনা যায়, 'তারা শিষ্টাচারের সংজ্ঞাটা আমাদের শেখাতে চাচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ আছে, দুঃখ লাগে কোনটা জানেন? এরা আবার জয় বাংলার কথা বলে। এরা ছাত্রলীগ করছে নাকি, এরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল কোনো কোনো হলে৷ কিন্তু রাতের বেলা এরা নিজেদের হলে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে৷ কারণ ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা, আর রোকেয়া হল শামসুন নাহার হলে থাকাটা কি এক কথা? আমি এর চেয়ে বেশি বললে মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আমি আর বেশি কিছু বলব না।'
এদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কুশপুত্তলিকায় জুতার মালা পরিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়
ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য কানেতা ইয়া লাম লাম বলেন, সম্প্রতি তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। এরপর গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্রী হিসেবে এই প্রতিবাদ জানিয়েছি। "
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: