বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান ও কার্যকরের দাবিতে আজ ২৫ নভেম্বর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিকাল ৩ টায় বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা ও যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান সোহেলসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি বলেন, "স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান ও কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুখ্যাত রাজাকার সাঈদী জেলে বসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বিলাসী জীবন করাকে আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মহামান্য আদালতের নিকট আমার দাবি, রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ পিটিশন বিবেচনা করে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান ও কার্যকর করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। দেইল্যা রাজাকারের ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কোন স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের ঠাঁই হবে না। সফল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীদের সকল ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দিতে প্রস্তুত আছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানরা এখনো জেগে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।"
সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, "কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমি বিচারপতি থাকা অবস্থায় ফাঁসি দেয়ার পক্ষে ছিলাম। রাজাকার সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যার সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতাকে সাঈদী নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আজকের এই দাবির প্রতি আমি সমর্থন জানাচ্ছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই একাত্তরের গণহত্যায় জড়িত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান ও কার্যকর করে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও লাখো শহীদের রক্তের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে পারবো। একাত্তরে গণহত্যার মূলহোতা জেনারেল নিয়াজীর ভাতিজা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশে আসার নাকি চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তির দোসর ইমরান খান বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করলে বিমানবন্দরে তাকে জীবন দিয়ে হলেও আমরা প্রতিহত করবো। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে কখনোই ঢুকতে দেয়া হবে না।"
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, "কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীর দোসররা বাংলাদেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের যেকোনো ষড়যন্ত্র অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও আমরা রুখে দিবো। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির দাবিতে আমাদেরকে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।"
ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন,
"স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে রুখে দিতে হবে। কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীর ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে আরোও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন রাজাকারের ঠাঁই হবে না। কারণ এসব পাকিস্তানি দোসররা এখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। এখনই উপযুক্ত সময় এদেরকে রুখে দেয়ার।"
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেখতে চায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের বড় দুটি সফল অর্জন হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। পিরোজপুরে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগের বিশটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের পিতা ও বিসাবালী হত্যাকাণ্ডের সাথে রাজাকার সাঈদী সরাসরি জড়িত ছিল। একাত্তরে পিরোজপুরে সাঈদী দেইল্যা রাজাকার নামে পরিচিত ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যায় জড়িত থাকার পরেও তার আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবাররা কখনোই মেনে নিতে পারিনা। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কারাগারে বিলাসী জীবন যাপন করছে রাজাকার সাঈদী। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অপরাধে সাঈদীর এদেশে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে রাজাকাররা থাকতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে ফাঁসির রায় প্রদান ও দ্রুত কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী আরোও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: