সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে গত কয়েক বছরে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এ আর আই) তথ্যমতে চলতি বছরের শুধু প্রথম নয় মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার। যা গত বছর ছিল ৩২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালে ছিল পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন এ আর আই এর পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান।
বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ (বিআই) ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টার (ডিটিসি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপের সঞ্চালনা করেন ঢাকা পোস্টের প্রধান প্রতিবেদক পার্থ সারথি দাস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিটিসি চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু।
অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, "দুর্ঘটনার ধরন বদলেছে, মুখোমুখি দুর্ঘটনার চেয়ে পেছন থেকে আঘাতের ঘটনা ঘটছে বেশি। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে ২৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। আর এসব সড়ক দুর্ঘটনায় যুবকদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি"।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, "ঢাকাসহ দেশের ২২২ ব্লগস্পট যদি ঠিক করা হয় তাহলে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশই কমে আসবে। তবে আমাদের দাবি অনুযায়ী, সর্বশেষ মাত্র ১২টি ঠিক করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধুমাত্র চালকদের দায়ী করলে হবে না। পথচারীও এখানে অনেকাংশে দায়ী। ফুটপাত না থাকলে পথচারীদের ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। এছাড়া বেশ কিছু নির্দেশনা আছে সেগুলো পথচারীরা মানেন না"।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, "আপনারা দেখবেন চালক হয় আমাদের সমাজের ওই মানুষগুলো যারা ছোটকালে বাবা-মা হারিয়েছেন অথবা বাবা-মার বিচ্ছেদের কারণে কোনো জরাজীর্ণ অবস্থায় বড় হয়েছে। এই মানুষগুলোই আস্তে আস্তে চালক হয়ে যাচ্ছে। তারপরও তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে"।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, সড়ক নিরাপদ করতে হলে কমপক্ষে ৬৭ লাখ চালককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে করোনার সময়েও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং পথচারীদেরকেও সচেতন হতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, ড্রাইভিং সেক্টরে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অভাব এবং চালকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। দেশে গাড়িচালক তৈরি হয় তার ওস্তাদের হাত-পা টিপতে টিপতে, গাড়িতে হ্যাল্পারি করতে করতে, তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এছাড়া চালকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নেই। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন চালকদেরকে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মালিকদের দেওয়া ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় বেপরোয়া গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
সংলাপে আরও অংশগ্রহণ করেন- বিআরটিএর সহকারী পরিচালক শহীদুল আজম, বিআরটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) শুকদেব ঢালী, ব্রি. জেনারেল (অব.) জিএম কামরুল ইসলাম, সেবক সভাপতি খান মো. বাবুল, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তাসনিয়া মেহরীন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ারের বাদল আহমেদ, মোটর ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের আবুল বাশারসহ প্রশিক্ষক ও চালকরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: