আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক এ এম হারুন-অর-রশীদ মারা গেছেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে।
অধ্যাপক হারুনের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক একুশে ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত।
বিজ্ঞানের উপর লেখা অধ্যাপক হারুনের বইগুলো দেশে বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ইংরেজি ও বাংলায় পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদের।
বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদের জানাজা হয়। এরপর মিরপুরের একটি কবরস্থানে দাফনের জন্য কফিন নিয়ে যাওয়া হয়।
অধ্যাপক হারুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
অধ্যাপক হারুনের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক এবং ইউজিসি অধ্যাপকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন।
হারুন-অর-রশিদের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১ মে বরিশালের নলছিটির বাহাদুরপুর গ্রামে।
১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি এবং সমন্বিতভাবে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর সর্বোচ্চ নম্বরসহ ১৯৫৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা কালীনারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন হারুন-অর-রশীদ। এরপর পিএইচডি ডিগ্রি নেন যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে।
১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দেশ-বিদেশের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক হারুন।
নোবেলজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আবদুস সালামের সঙ্গে তার সখ্য ছিল, একসঙ্গে গবেষণাও করেন তারা।
অধ্যাপক হারুন একমাত্র বাংলাদেশি যিনি পরপর তিন বার নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সদস্য (১৯৭২, ১৯৮৬, ১৯৯৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯১ সালে তাকে ‘একুশে পদক’, ২০০৯ সালে ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত করে।
কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য, বাংলা একাডেমির নির্বাহী কাউন্সিল, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটি ও এক্সামিনেশন রিফর্মস কমিটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬ সালে তিনি ইউজিসি অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন।
অধ্যাপক এ এম হারুন-অর-রশীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী ঢাবি অধ্যাপকের মৃত্যু
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: