প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ধামাকা শপিং ডট কমের সিওওসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। টঙ্গীতে এক ব্যক্তির মামলার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ধমাকা শপিং ডট কমের সিওও মো. সিরাজুল ইসলাম রানা, মোবাইল ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল বিভাগের প্রধান মো. ইমতিয়াজ হোসেন সবুজ, ইলেক্ট্রনিক্স ক্যাটাগরির হেড মো. ইব্রাহীম স্বপন।
আজ দুপুরে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্রাটিজি নিয়ে মাঠে কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর পশ্চিম থানায় এক ভুক্তভোগী প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ধামাক শপিং ডট কমের চেয়ারম্যান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিওওসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১৩। ৪০৬, ৪২০, ১০৯, ৫০৬ পেনাল কোডে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী। এছাড়া আরও বেশ কিছু অভিযোগ করেন।
মঈন আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নাই, ব্যবসায়িক একাউন্টও নাই। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের একাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন করা হয়েছে। এপর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই একাউন্টে যত সামান্য টাকা জমা রয়েছে। বর্তমানে সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা। কাস্টমার বকেয়া রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। আর কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা।
এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েকমাস যাবৎ প্রতিষ্ঠানের অফিস এবাং ডিপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরের জুন মাস থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। গত এপ্রিল মাসে একাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে ফেলার কারণে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মহাখালীতে হেড অফিস ও তেজগাঁওয়ের বট তলায় তাদের একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬০০টি ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে যার মধ্যে নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধামাকা শপিং ডট কম ছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড, বেভারেজ লিমিটেড ও মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য তৈরি কারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। তাছাড়া, হোল্ড মানি প্রসেস প্লান অর্থাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে রেখে অর্থ সরিয়ে ফেলা ছিলো তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
কমান্ডার মঈন জানান, প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এই গ্রাহকদের তারা বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিতো। যেমন, সিগনেচার কার্ড ২০%-৩০% এমনকি ৫০% ছাড়ও দিতো। এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে তা সরিয়ে ফেলা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের সঙ্গে কর্মীদের কোনো যোগযোগ নাই। এমনকি দেখাও হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে গত এপ্রিল থেকে মালিক ও ৬ পরিচালক সবাই পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান চালমান রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এতদিন কিভাবে কোনো বৈধ কাগজ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে র্যাবে মিডিয়া উইং বলেন, তাদের এই সমস্যা ধরা পড়েছে বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪টি একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। তাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করছে সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা শাখা। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে।
প্রধান আসামিরা এখন কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের গ্রেফতারে কাজ করছি। অভিযান চলমান রয়েছে। তারা দেশে আছে না বিদেশে পালিয়ে গেছে তা এখনো নিশ্চিত না। তারা দেশেও থাকতে পারে বা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: