আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে অপরকে সুরক্ষিত করুন। সোমবার কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। গার্গল করা, ভাপ নেয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নির্দেশনাগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সেগুলো মেনে নিয়ে আপনারা নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন। এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়।’
কৃষিক্ষেত্রে তার সরকারের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোনো কষ্টে থাকতে হয়নি। কারণ আমরা তাদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বর্গাচাষিদের জন্য বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম ১২ টাকায় নামিয়ে এনেছি যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ সরবরাহ করছি। সঙ্গে সঙ্গে কৃষির যান্ত্রিকীকরণে জাতির পিতার যে লক্ষ্য ছিল- সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি। সেখানে ৭০ শতাংশের উপর ভর্তুকি দিচ্ছি, কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি, যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে সোলার-প্যানেল ব্যবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবো। আমাদের দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রফতানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পান, তার জন্য যথাযথ আমরা দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবেন তারা খাবার পাবেন না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যের জন্য কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হতে পারে, তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কি না বা কতটুকু করবেন সব পরিমাণ যাতে পেতে পারেন সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে লক্ষে তথ্যকেন্দ্র আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সকলের হাতে হাতে তুলে দিয়েছি।’
গবেষণার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দিই। আজ কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন- ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো, দলের নেতা-কর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম। আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু করে সকলে মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: